পিছিয়ে পড়বে মোদী স্টেডিয়াম?

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দেশ

নিউজ পোল স্পোর্টস ব্যুরো : অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন রাজধানী অমরাবতী এখন শুধু দেশের মধ্যে সেরা হতে চায় না, বরং তাদের লক্ষ্য বিশ্বের এক নম্বর আসন দখল করা। এই স্বপ্ন পূরণের পথে অন্যতম বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে অমরাবতীর নতুন প্রস্তাবিত ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আসন সংখ্যার দিক থেকে এই স্টেডিয়াম নরেন্দ্র মোদী ক্রিকেট স্টেডিয়ামকেও ছাপিয়ে যেতে চলেছে।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম হল নরেন্দ্র মোদী ক্রিকেট স্টেডিয়াম, যা ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে অবস্থিত। আগে এটি মোতেরা স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল, যা আমূল সংস্কারের পর ২০২০ সালে নতুন নামে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১,৩২,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামে ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতের আরেক ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়াম কলকাতার ইডেন গার্ডেন একসময় দেশের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছিল, যার দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল এক লাখ। কিন্তু ২০১১ সালে আধুনিকীকরণের সময় তা কমিয়ে ৬৮,০০০ করা হয়। ফলে বর্তমানে এটি ভারতের দ্বিতীয় এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। অন্যদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়াম হল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, যার আসন সংখ্যা ১,০০,০০০।

কিন্তু এবার ভারতের সব স্টেডিয়ামকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চায় অন্ধ্রপ্রদেশ। অমরাবতীতে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন করা হয়। হায়দরাবাদ তেলেঙ্গানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অন্ধ্রপ্রদেশ নতুন রাজধানী গড়ার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই অমরাবতী শহর গড়ে তোলা হচ্ছে। এই নতুন শহরের ২০০ একর জমির উপর গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধুনিক স্পোর্টস ভিলেজ। এই স্পোর্টস ভিলেজের ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত হবে ১.৫ লাখ দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম, যা নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকেও ছাড়িয়ে যাবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে ৮০০ কোটি টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার এই প্রকল্পে অর্থায়ন করলেও, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই )-ও এতে বড় অঙ্কের সহায়তা দেবে। শুধু তাই নয়, স্টেডিয়ামের নকশা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিশেষ ভূমিকা রাখবেন দুই প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার—মিতালি রাজ এবং রবিন সিং। বিশ্বের বৃহত্তম স্টেডিয়ামের পাশাপাশি, অন্ধ্রপ্রদেশে তিনটি নতুন ক্রিকেট অ্যাকাডেমি স্থাপন করা হবে। নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে এই অ্যাকাডেমিগুলো তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া বিশাখাপত্তনম স্টেডিয়ামের আমূল সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে, যাতে আইপিএল-এর বড় ম্যাচগুলি এখানে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার শুধু ক্রিকেট স্টেডিয়াম নয়, পুরো শহরটিকেই ভারতের অন্যতম ক্রীড়া হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সেই লক্ষ্যে, ২০২৯ সালে ভারতের জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা (ন্যাশনাল গেমস) অমরাবতীতে অনুষ্ঠিত হবে। নতুন স্টেডিয়াম এবং স্পোর্টস ভিলেজ তৈরি হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় ম্যাচও এখানেই আয়োজন করা হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কেসিনেনি শিবনাথ জানিয়েছেন, ‘আমরা শুধু ভারতের মধ্যে সেরা হতে চাই না, আমাদের লক্ষ্য বিশ্বসেরা স্টেডিয়াম গড়া। ২০২৯ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে। একবার সম্পূর্ণ হলে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং অত্যাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।’

এই প্রকল্প সফল হলে ভারত আবারও বিশ্ববাসীর নজরে আসবে এবং ক্রিকেটের রাজধানী হিসেবে আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে যাবে। এখন দেখার বিষয়, নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের রেকর্ড ভেঙে সত্যিই বিশ্বসেরা হতে পারে কি না অমরাবতীর নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম!