দ্য আর্ট অফ: Googly Bowling

ক্রিকেট ক্রীড়া

শুভম দে: বলা হয়ে থাকে ক্রিকেটের (Cricket) সবথেকে কঠিন জিনিস হচ্ছে লেগস্পিন (Leg Spin)। আবার সবথেকে সুন্দর জিনিসটাও হচ্ছে লেগস্পিন। লেগস্পিন হচ্ছে ক্রিকেটের সবথেকে কঠিন অথচ সুন্দরতম শিল্প (Art)। আর লেগস্পিনাররা (Legspinner) যখন তাদের স্বভাবত বোলিং অ্যাকশনের (Bowling Action) দৃশ্যত খুব একটা পরিবর্তন না ঘটিয়ে অফ-ব্রেক (Off-break) বল করে ব্যাটসম্যানদের (Batsman) ধোঁকা দেন-সেই ভেলকিবাজি ক্রিকেটের বাইশ গজে ‘গুগলি’ (Googly Bowling) নামে পরিচিত। ক্রিকেটের অন্যতম দর্শনীয় সেই শিল্প যা বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানদের বোকা বানিয়ে এসেছে চিরকাল। তা এই ‘গুগলি’ -র প্রবক্তাটি কে?

আর‌ও পড়ুন: Dhyan Chand: হকির জাদুকরের আসল নাম ধ্যান চাঁদ নয়, তাহলে কী?

বার্নাড বসানকুয়েট (Bernard Bosanquet)— নামে এক ইংরেজ ভদ্রলোকের হাতের জাদুর ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল ‘গুগলি’ (Googly Bowling) নামক লেগস্পিন বোলিংয়ের এই সেরা অস্ত্রের। ১৮৭৭ সালের ১৩ অক্টোবর মিডলসেক্সে (Middlesex) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এখনকার দিনে কোনো স্পিন বোলারকে ব্যাটসম্যান বুঝতে না পারলে আমরা তাদের বলি ‘মিস্ট্রি স্পিনার’ (Mystery Spinner) অর্থাৎ তাঁর বোলিং রহস্য ব্যাটসম্যানের কাছে বোধগম্য নয়। তা বসানকুয়েট ছিলেন এরকমই এক রহস্যময় লেগস্পিনার। লেগস্পিন নামক শিল্পটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অসামান্য উচ্চতায়। আর তাঁর হাতের জাদুতে ‘গুগলি’ হয়ে উঠেছিল আরও বিষাক্ত।

কথিত আছে যে, ১৯০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিপক্ষে তিনি প্রথম ‘গুগলি’ (Googly Bowling)-র প্রয়োগ করেন। তবে তখন বসানকুয়েটের নামানুসারে ‘বসি’ নামে পরিচিত ছিল এখনকার গুগলি। উড়িয়ে দেন কিংবদন্তি (Legend) অস্ট্রেলিয় ব্যাটসম্যান ভিক্টর ট্রাম্পারের (Victor Trumper) মাঝের স্টাম্প (Middle Stump) শোনা যায় তখনকার দিনে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কেরা(Opponent Captain)এনিয়ে বিস্তর অভিযোগ‌ও করতেন যে এ নাকি অনুচিত!

বসানকুয়েট মাত্র সাতটি টেস্ট (Test Cricket) খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের (England)হয়ে। ২৪.১৬ গড়ে (Bowling Average) দুবার ৫ উইকেট (Five Wicket Haul) সহ উইকেট (Wicket) নিয়েছিলেন ২৫ টি। সেরা এক ইনিংসে (Innings) ৮/১০৭। তবে মাত্র সাতটি টেস্ট খেললেও রেকর্ড (Record) গড়েছিলেন তাতেই। টেস্টে ২৫ টি বা তার বেশি উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে তাঁর স্ট্রাইক-রেটের (৩৮.৮০) থেকে বেশী স্ট্রাইক-রেট (Strike Rate) ছিল মাত্র দু’জন বোলারের‌ই। একজন তাঁর স্বদেশী সর্বকালের অন্যতম সেরা বোলার জর্জ লোহম্যান (George Lohmann) এবং আরেকজন দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) বিখ্যাত পেসার (Pacer) মাইক প্রোক্টর (Mike Procter)।

নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে (First Class Cricket) ২৩৫ টি ম্যাচে ২৩.৮০ গড়ে ১১ বার দশ-উইকেট (Ten Wicket Haul)ও ৪৫ বার পাঁচ-উইকেট সহ ৬২৯ টি উইকেট ছিল বসানকুয়েটের ঝুলিতে। সেরা ৯/৩১ (Best Bowling Figure)। আর ব্যাট হাতে ৩৩.৪১ গড়ে ২১ টি শতরান সহ ১১,৬৯৬ রান করেন ‘গুগলি’ -র (Googly Bowling) স্রষ্টা। স্যার ডনের (Sir Don Bradman) টেস্ট ক্রিকেট গড় ১০০ হত যদি না ইংলিশ স্পিনার এরিক হোলিস (Eric Hollies) এই ‘গুগলি’ বোলিং (Googly Bowling) না জানতেন। মাত্র ৪ রান আর দরকার ছিল অজি কিংবদন্তির (Aussie Legend) এই অসামান্য কীর্তি গড়তে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে নিজের অন্তিম ইনিংসে ‘ডাক’ (Duck: শূন্য রান) করে ফিরে যেতে হয় তাকে এই গুগলির কারণেই। পাকিস্তানের আব্দুল কাদিরকে (Abdul Qadir) সর্বকালের (Alltime Great) অন্যতম সেরা লেগস্পিনার হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু তার জাদু‌ও ফিকে পড়ে যেত স্যার বসানের তাঁর টিমমেটদের মজার ছলে করা এই গুগলি নামক বোলিং শৈলীটি না থাকলে।