নিউজ পোল স্পোর্টস ব্যুরো: ‘অন্ধজনে দেহো আলো, মৃতজনে দেহো প্রাণ’ — কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) এই গান বাস্তবায়িত করে গেলেন বাংলার প্রখ্যাত টেবিল টেনিস কোচ ভারতী ঘোষ (Bharati Ghosh)। সোমবার দুপুর ১২:২০ নাগাদ প্রয়াত হয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। সারাজীবন টেবিল টেনিসের (Table Tennis) সাধনায় রত ছিলেন তিনি। টেবিল টেনিস ছিল তাঁর প্রাণ। অনেক দুঃস্থ পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলে-মেয়েদের দিয়েছেন টেবিল টেনিসের পাঠ। আর মৃত্যুর পরেও মরণোত্তর চক্ষুদান করে গেলেন শিলিগুড়ির ‘বাঈ’ (এই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি)।
আরও পড়ুন: TT Coach Bharati Ghosh Demises: প্রয়াত বাংলার কিংবদন্তি টিটি কোচ ভারতী ঘোষ
ভাইয়ের বন্ধুর হাত ধরে টেবিল টেনিসে আসা। গুটিকয়েক মেয়ের সঙ্গে নিতেন টিটির (TT) পাঠ। তবে হাতে ধরে কেউ খেলাটি শেখায়নি ভারতী ঘোষকে (Bharati Ghosh)। ছিল না কোন কোচও (Coach)। সিনিয়রদের দেখে খেলতে শেখেন এবং ভালোবেসে ফেলেন খেলাটিকে। কোন কোচিং ডিগ্রি ছিল না। কিন্তু তারপরেও তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০০০ জন টিটি প্লেয়ার (TT Player)।

বিগত কয়েক মাস ধরে বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ভারতী দেবী (Bharati Ghosh)। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব (Gautam Deb) দেশবন্ধু পাড়ায় তাঁর বাড়ি গিয়ে মাটিগাড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন তাঁকে। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। ৮৩ বছর বয়সে অগণিত ছাত্র-ছাত্রীকে অভিভাবকহীন করে চলে গেলেন ‘ক্রীড়া গুরু’। উল্লেখ্য রাজ্য সরকারের (WB Government) তরফে ২০১৯ সালে বঙ্গরত্ন এবং ২০২১ সালে ক্রীড়া দপ্তরের তরফে ‘ক্রীড়া গুরু’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল তাঁকে।
নিউজ পোল বাংলা ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/
এদিন ভারতী ঘোষের (Bharati Ghosh) দেহ শেষ বারের মতো নিয়ে আসা হয় ওনার দেশবন্ধু পাড়ার বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে দেশবন্ধু স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবে ওনাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান ক্রীড়াপ্রেমী, সমাজসেবী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলের মানুষেরা।এরপর কিরন চন্দ্র শ্মশান ঘাটে ওনার শেষক সম্পন্ন করা হয়। সারাজীবন টেবিল টেনিস অন্ত প্রাণ ছিলেন তিনি। বিয়েও করেননি টেবিল টেনিসে যদি সময় দিতে না পারেন সেই ভয়ে। তাঁর বহু ছাত্র-ছাত্রী পদক জিতেছে প্যারালিম্পিকসে (Paralympics)।

কোচ ভারতী ঘোষের (Bharati Ghosh) হাতে গড়া একাধিক প্যাডলারের (Paddler) মধ্যে অন্যতম ভারতীয় দলের প্রাক্তন টিটি প্লেয়ার তথা কোচ অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত মান্তু ঘোষ (Mantu Ghosh) জানিয়েছেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। ভাই আমাদের কাছে কোচের থেকেও বড় বাবা-মায়ের মত ছিলেন। খুব খারাপ লাগছে।“ তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলেও। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেছেন, “অনেক চেষ্টা করেছিলাম সুস্থ করে তোলার। কিন্তু পারলাম না। কয়েকদিন আগে দেখতে গিয়েছিলাম। খেতে চাইছিলেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ ছিল এরকম কিংবদন্তিকে সম্মান দেওয়া।“ শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ (Shankar Ghosh) জানান, “অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। খেলার জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।“