Birbhum News: মায়ের মৃত্যুতেও অটল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী

জেলা রাজ্য

নিউজ পোল ব্যুরো: বীরভূম জেলার (Birbhum News) বোলপুর শ্রীনিকেতন ব্লকের রূপপুর গ্রামে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, যা শুধু ওই পরিবারের জন্য নয়, পুরো এলাকার জন্যই শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনা এক উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary) পরীক্ষার্থীর জীবনে এক গভীর শোক নিয়ে এসেছে। তবে, শিক্ষাঙ্গনের মানুষদের মানবিক সহায়তা ও সহানুভূতি এক নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, যা এক শিক্ষকের দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়।

আরও পড়ুনঃ TMC Councillor: কাটমানির অভিযোগে নিখোঁজ পোস্টার, বিজেপিকে পাল্টা দুষলেন তৃণমূল কাউন্সিলর

আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ রূপপুর গ্রামের এক তরুণ ছাত্র রুপঙ্কর ভাদুড়ী, যিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন, তার মা অঞ্জু ভাদুড়ী রান্নাঘরে ভাত রান্না করছিলেন। সে সময় হঠাৎ করে তার মাথায় তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হয় এবং এক মুহূর্তেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা ভীষণভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন। রুপঙ্করের বাবা বিপদ তারণ ভাদুড়ী, যিনি পেশায় চাষী (Farmer), তিনি একদিকে শোকস্তব্ধ, অন্যদিকে সংসারের হাল ধরার জন্য বিব্রত ছিলেন। এদিকে, রুপঙ্করের ছোট ভাই ঋতম ভাদুড়ী, যিনি একে অপরের মতোই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী (Higher Secondary candidate), তিনি ও রুপঙ্কর একসাথে শান্তিনিকেতন থানার অন্তর্গত বিনুড়িয়া নীরদ বরনী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর রুপঙ্কর ও ঋতমের মনোবল চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়ে। তারা পরীক্ষা দিতে যাওয়া এবং মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার মধ্যে একটি কঠিন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য তাদের পরিবার ও শিক্ষকদের কাছ থেকে সাহায্য আশা করছিল।

এমন কঠিন সময়ে, শিক্ষাঙ্গনের দৃষ্টান্তস্বরূপ সহায়তা দেখা যায়। বিনুড়িয়া নীরদ বরনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা দাস রায়, সহ শিক্ষক গোবিন্দ কুমার নস্কর এবং সমীরেন্দ্র নাথ পাল মহাশয়, যারা এই পরিস্থিতিতে রুপঙ্কর ও ঋতমের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেন। তাঁরা দুই ছাত্রকে কোনো রকমে বুঝিয়ে, তাদের পরীক্ষা কেন্দ্র, বোলপুর থানার অন্তর্গত বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে (Vivekananda High School) পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।

এরপর, প্রধান শিক্ষিকা এবং সহ শিক্ষক সনাতন চ্যাটার্জী (Sanatan Chatterjee) পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করেন, যাতে ছাত্রদের কোনো সমস্যা না হয়। ছাত্ররা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, যা ছিল রুপঙ্করের জন্য দর্শন (Philosophy) বিষয়। পরবর্তীতে, দুই ঘণ্টা পরীক্ষা শেষে, প্রধান শিক্ষিকা ও সহ শিক্ষক ছাত্রদ্বয়কে নিয়ে রূপপুর গ্রামে শ্মশানে যান, যেখানে রুপঙ্করের মায়ের মুখাগ্নি পর্ব (Funeral Ritual) সম্পন্ন হয়।

এভাবে, শিক্ষকের সহানুভূতির এক চমৎকার দৃষ্টান্ত রচিত হয়, যেখানে তারা ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শিক্ষা জীবনের অংশ হিসেবে তাদের শোকময় পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সহায়তা করেন। রুপঙ্কর ও ঋতম, যে শোকের মধ্যে নিজের পরীক্ষা শেষ করেছেন, তাদের জীবনের এ কঠিন সময়ে শিক্ষকরা যে সহায়তা করেছেন তা প্রশংসনীয়।

নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/

এই ঘটনায় বীরভূম জেলার (Birbhum News) ডি পি সি (DPC) সভাপতি প্রলয় নায়েক (Proloy Nayek) এবং সংসদ সদস্য অভিজীত নন্দন সহায়তা করেন ওই পরীক্ষার্থীকে। বিবেকানন্দ বিদ্যালয়ের (Vivekananda School) প্রধান শিক্ষিকা শুভ্রা ঘোষ (Shubhra Ghosh) এবং সংসদ সদস্য কাজল কুমার দাস আরও সহযোগিতা প্রদান করেন রুপঙ্করকে।

উল্লেখ্য, এদিন রুপঙ্করের পরীক্ষার বিষয় ছিল দর্শন (Philosophy), তবে আগামীকাল ঋতম ও রুপঙ্করের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, সংস্কৃত (Sanskrit), থাকবে। শিক্ষিকারা চিন্তিত যে, তার ভবিষ্যৎ পরীক্ষাগুলিতে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, তার জন্য কীভাবে তাকে সহায়তা করা যায়। এই শোকাবহ ঘটনাটি পরিবারে গভীর শোক এনেছে ঠিকই তবে এটি শিক্ষাঙ্গনে মানবিক সহানুভূতির এক চমৎকার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।