শুভম দে: সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (Sunrisers Hyderabad) মানেই রোজ আড়াইশো বা তিনশো নয় বুঝিয়ে দিল লখনউ সুপার জায়ান্টস (SRH vs LSG)। হায়দ্রাবাদ ব্যাটিংয়ের (SRH Batting) মূল জীবনী শক্তি যে ‘টপ-থ্রি’ (Top Three Order) এবং এই বিধ্বংসী তিনজনকে যদি কোন ভাবে উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই সাজঘরে (Dressingroom) ফিরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ম্যাচ অনায়াসে পকেটে পুরে ফেলতে পারে প্রতিপক্ষ তা প্রমাণ করে দিল টিম ঋষভ অ্যান্ড কোং। অরেঞ্জ আর্মির (Orange Army) দেওয়া ১৯১ রানের টার্গেট ১৬.১ ওভারেই তুলে ফেললেন তাঁরা। সৌজন্যে নিকোলাস পুরান (৭০) এবং মিচেল মার্শ (৫২)।
আরও পড়ুন: Rohit Sharma: নেতৃত্বের ব্যাটন রোহিতের হাতেই
হায়দ্রাবাদ বনাম লখনউ (SRH vs LSG) মানেই তিক্ত স্মৃতি উঁকি দেয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। গত আইপিএলে এই ম্যচেই ১০ উইকেটে লজ্জার হার হজম করেছিল লখনউ। আর তারপরেই ঘটেছিল সেই অন্ধকার অধ্যায়। দৃশ্যত বিরক্ত লখনউ মালিক সঞ্জীব গোয়েংকা মাঠের মধ্যেই ভর্ৎসনা করেছিলেন অধিনায়ক কে এল রাহুলকে। রাহুল এবারে দিল্লি ক্যাপিটালসে। ঐ ঘটনার পরেই দুই পক্ষ সম্পর্ক ছিন্ন করে নয়া মরশুমে। এবারে প্রথম ম্যাচে দিল্লির কাছে হেরেছিল এলএসজি। সেই ম্যাচের পরেও মাঠে নেমে নতুন অধিনায়ক ঋষভ পন্থের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছিল সঞ্জীব গোয়েংকাকে। ফলে এই ম্যাচ হারলে চাপে পড়তেন পন্থ। কিন্তু টসের সময়ই তিনি বলেছিলেন, “হায়দ্রাবাদ যত রানই করুক, আমরা তুলে ফেলব।“ আর তা সত্যি করেই দেখাল তাঁর দল। মধুর প্রতিশোধে পাঁচ উইকেট অরেঞ্জ আর্মিকে উড়িয়ে দিল তাদেরই ঘরের মাঠে।

বৃহস্পতিবার (SRH vs LSG) নিজামের শহর বোধহয় একটাই কথা বলছিল, “ইয়ে হাত মুঝে দে দে ঠাকুর।“ কারণ এদিন শার্দুল ঠাকুরের হাতেই শেষ হয়ে গেল তাদের দল। ভারতীয় অলরাউন্ডার একাই ছাড়খার করে দিলেন হায়দ্রাবাদ ব্যাটিং। সবথেকে বড় বিষয় বিপক্ষ দলের বিধ্বংসী টপ-থ্রি’র দুজনকে ফেরালেন তিনি। শুরুতেই ফেরালেন ট্র্যাভিস হেডের ‘ক্রাইম ইন পার্টনার’ অভিষেক শর্মাকে (৬) এবং তারপরের বলেই ইশান কিষাণকে বোকা বানালেন লেগ সাইডে লুজ ডেলিভারিতে। যে বল ছাড়লেই ওয়াইড হয়! আগের ম্যাচের শতরানকারী ফিরলেন শূন্য রানে। আর ট্র্র্যাভিস হেড খানিক চেষ্টা করলেও ২৮ বলে ৪৭ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন তরুণ দিল্লি পেসার প্রিন্স যাদবের বলে।

এরপর নবাগত অনিকেত ভার্মা ছাড়া হায়দ্রাবাদের আর কোন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানই সেভাবে বড় রান (SRH vs LSG) করতে পারেননি। মধ্যপ্রদেশের তেইশ বছরের অলরাউন্ডার পাঁচটা ছয়ের সাহায্যে মাত্র ১৩ বলে ৩৬ রান করেন। তাঁকে ফেরান লখনউ সুপার জায়ান্টসের আরেক তরুণ উঠতি ট্রতিভা দিগ্বেশ রাঠী। শেষদিকে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ব্যাট থেকে আসা তিনটি ছক্কা হায়দ্রাবাদকে পৌঁছে দেয় ১৯০ রানে। ৩০০ রানের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়! এদিন লখনউয়ের হয়ে চার উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর। কে বলবে তাঁকেই কোন দল নেইনি এবারের আইপিএলে! টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে চোটগ্রস্ত মহসিন খানের বদলে তাঁকে দলে শামিল করে গোয়েংকার লখনউ। বাকি চার উইকেট নেন আবেশ খান, দিগ্বেশ রাঠী, রবি বিষ্ণোই এবং প্রিন্স যাদব।

রান তাড়া (SRH vs LSG) করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় লখনউ। দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই মহম্মদ শামি ফিরিয়ে দেন এডেন মারক্রমকে। কিন্তু তারপরের উইকেট যখন পরে তখন ৮.৪ ওভারে ১২০ রান তুলে চালকের আসনে পন্থ বাহিনী। যার আগে পর্যন্ত তান্ডবলীলা চলে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। আর যাঁরা চালালেন তাঁদের একজনের নাম মিচ মার্শ আর অন্যজনের নাম নিকোলাস পুরান। প্রথমজন কিছুটা ধরে খেললেও দ্বিতীয়জন খাঁটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের স্টাইলে একার হাতেই ধ্বংস করে দিলেন অরেঞ্জ আর্মিকে। ১৮ বলে করলেন অর্ধশতরান। মারলেন ছ’টি ছয় এবং ছ’টি চার। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে লেগ বিফোর হয়ে যখন ফিরছেন তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ২৬ বলে ৭০ রান। পরপর দু’ম্যাচেই পুরান বোঝালেন ফর্মে থাকলে বিপক্ষ দলের ত্রাস তিনি। মার্শ করলেন ৩১ বলে ৫২ রান।
নিউজ পোল বাংলা ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/
মার্শ-পুরান জুটিতে আসে ১১৬ রান। পাওয়ার প্লেতেই ৭৭ রান তুলে ফেলেন তাঁরা। তবে এদিনও লখনউকে চিন্তায় রাখল ঋষভ পন্থের ফর্ম। ১৫ বলে ১৫ করে হর্ষল প্যাটেলের বলে শামির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় দলে থাকলেও একটিও ম্যাচ খেলেননি তিনি। যার প্রভাব পড়েছে তাঁর ব্যাটিংয়ে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শেষে পুরনো দলের বিরুদ্ধে মাত্র ৮ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থেকে মরশুমের প্রথম দুই পয়েন্ট (SRH vs LSG) তুলে নেন আব্দুল সামাদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ১৯০/৯ (২০)
ট্রাভিস হেড ৪৭(২৮), অনিকেত ভার্মা ৩৬(১৩)
শার্দুল ঠাকুর ৪/৩৪(৪)
লখনউ সুপার জায়ান্টস ১৯৩/৫ (১৬.১)
নিকোলাস পুরান ৭০(২৬), মিচেল মার্শ ৫২(৩১)
প্যাট কামিন্স ২/২৯(৩)
লখনউ সুপার জায়ান্টস জয়ী পাঁচ উইকেটে