নিউজ পোল ব্যুরো: আজকের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য (mental health) নিয়ে নানা ধরণের ভুল ধারণা ও কুসংস্কার প্রচলিত আছে। অনেকেই এখনও মনে করেন মানসিক অসুখ (mental illness) শুধুমাত্র “বড়লোকের ব্যামো” বা বিলাসিতার অংশ। এই ধরণের মন্তব্য শুধু ভুল নয়, বরং বিপজ্জনকও বটে। মানসিক রোগ একটি বাস্তব ও জটিল সমস্যা, যার মধ্যে নানা ধরণের উপসর্গ ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক রোগের কথা বলা প্রয়োজন — বাইপোলার ডিজঅর্ডার (bipolar disorder)। এটি এমন এক মানসিক অবস্থা (Mental Health) যেখানে একজন ব্যক্তি এক চরম মেজাজ থেকে আরেক চরমে দোদুল্যমান হন — কখনও অত্যন্ত উত্তেজিত ও আনন্দিত (mania/hypomania), আবার কখনও গভীর বিষণ্নতায় নিমজ্জিত (depression)। এই দুটি চরম অবস্থা একজন রোগীর জীবনে নানা রকম জটিলতা ও অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন:- Nadia Incident: ইনজেকশনের জেরে একের পর এক শিশু অসুস্থ

বাইপোলার ডিজঅর্ডার কী?
বাইপোলার ডিজঅর্ডার একটি মুড ডিসঅর্ডার (mood disorder), যেখানে রোগীর মনোভাব, চিন্তাভাবনা, ঘুম, শক্তি, এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে বড় ধরণের পরিবর্তন দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কখনও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ও সক্রিয় হয়ে ওঠেন, আবার কখনও প্রচণ্ড হতাশা ও ক্লান্তিতে ভেঙে পড়েন। এই অসুখ মূলত দুইটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত — ম্যানিয়া (mania) এবং ডিপ্রেশন (depression)। কখনও আবার মৃদু ম্যানিয়াক অবস্থাকে হাইপোম্যানিয়া (hypomania) বলা হয়, যেখানে উপসর্গগুলি তুলনামূলকভাবে কম তীব্র হলেও ক্ষতিকর হতে পারে।
ম্যানিয়া বা হাইপোম্যানিয়ার উপসর্গ
ম্যানিয়াক পর্যায়ে একজন ব্যক্তি সাধারণত অত্যন্ত উদ্যমী, চঞ্চল এবং আত্মবিশ্বাসে পূর্ণ থাকেন। এটি কখনও কখনও আশেপাশের মানুষদের কাছে ইতিবাচক বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এর গভীরে রয়েছে আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব ও যুক্তিহীন সিদ্ধান্তগ্রহণের ঝুঁকি।
সাধারণ উপসর্গগুলো হল:
- অস্বাভাবিক রকমের আনন্দ বা উত্তেজনা অনুভব করা
- মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস (excessive self-esteem)
- ঘুমের প্রয়োজন খুব কমে যাওয়া
- প্রচুর কথা বলা বা দ্রুত কথা বলা (rapid speech)
- নানা রকম ভাবনা একসাথে মাথায় আসা বা এক চিন্তা থেকে আরেকটিতে দ্রুত চলে যাওয়া (racing thoughts)
- মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা
- হঠাৎ করে নানা পরিকল্পনায় যুক্ত হওয়া
- ঝুঁকিপূর্ণ ও বেপরোয়া আচরণ যেমন অপ্রয়োজনীয় খরচ, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক (risky sexual behavior), বা অযৌক্তিক বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত
ডিপ্রেশনের উপসর্গ
ডিপ্রেশন পর্যায়ে একজন ব্যক্তি নিজের ভেতরে ডুবে যান, এবং চারপাশের জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন। এই সময়ে তিনি নিজেকে অপাংক্তেয়, ক্লান্ত ও আগ্রহহীন মনে করেন।
ডিপ্রেশনের সাধারণ উপসর্গগুলো হল:
- দীর্ঘ সময় ধরে দুঃখ, হতাশা বা শূন্যতা অনুভব করা
- আগে যেসব কাজ আনন্দ দিত, তাতে আর আগ্রহ না থাকা (loss of interest or pleasure)
- সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া বা সবসময় শক্তিহীন অনুভব করা
- ঘুমে সমস্যা, হয় অতিরিক্ত ঘুমানো নয়তো ঘুমোতে না পারা
- ক্ষুধার পরিবর্তন, ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
- মনোযোগ দিতে বা সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হওয়া
- নিজেকে অপরাধী বা অমূল্য মনে করা
- মৃত্যুর চিন্তা বা আত্মহত্যার প্রবণতা (suicidal thoughts)

রোগের প্রকৃতি ও গুরুত্ব
বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে উপসর্গের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব রোগীভেদে আলাদা হয়। কারও ক্ষেত্রে ম্যানিয়া বা ডিপ্রেশনের পর্ব কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়, আবার কারও ক্ষেত্রে মাসের পর মাস ধরে চলতে পারে। অনেক সময় রোগীর আচরণ স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে তিনি তীব্র মানসিক দোলাচলে ভুগছেন। এই অসুখকে অবহেলা করা উচিত নয়। প্রাথমিক উপসর্গগুলো দেখা দিলেই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের (psychiatrist) পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা (treatment for bipolar disorder) ও মানসিক সমর্থন পেলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বাইপোলার ডিজঅর্ডার কোনও লজ্জার বিষয় নয়। এটি একটি মানসিক সমস্যা, যেটির জন্য চিকিৎসা, বোঝাপড়া এবং সহানুভূতি প্রয়োজন। সমাজের উচিত এই ধরণের রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং যারা এতে ভুগছেন, তাদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টিভঙ্গি রাখা।
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT
মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। ভুল ধারণা আর অবহেলা নয়, এবার সময় এসেছে মানসিক রোগগুলিকে (Mental Health) বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার। বাইপোলার ডিজঅর্ডার সম্পর্কে সচেতনতা (awareness) বাড়লে এবং সহানুভূতি বৃদ্ধি পেলে অনেক মানুষের জীবন আরও সুন্দর ও স্বাভাবিক হতে পারে।