Bhutopurbo: পুতুলবাড়ির অন্দরমহলে আতঙ্ক! ‘ভূতপূর্ব’ টিমের রহস্যে মোড়া ভূতযাত্রা

পেজ 3 বিনোদন

নিউজ পোল ব্যুরো: খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছে ‘ভূতপূর্ব’ (Bhutopurbo)। তিন সাহিত্যিকের তিনটি ভৌতিক গল্পের সমাহারে এই ছবি নির্মিত। সেটাকে উদ্‌যাপন করতেই সিনেমার মেকি ভূত নয়, বরং শহর কলকাতার (Kolkatar) ভৌতিক বলে খ্যাত স্থান দর্শনে বেরিয়ে পড়লেন এই ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। রাত প্রায় ১১:৩০ বাজতে ছলেছে। উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি (Kumortuli) এলাকা মোটামুটি অনেকটাই শান্ত বলেই পরিচিত। সেখানে সকালের ব্যস্ততার লেশমাত্র নেই। বরং দেখা যায় আকাশে মেঘের সঙ্গে ঘোলাটে চাঁদ। তিন সাহিত্যিকের গন্তব্য আহিরিটোলা (Ahiritola) ঘাটের কাছেই অবস্থিত পুতুলবাড়ি (Putulbari)। এই ভুত সেই ভুত নয় আর নয় কোনো ভৌতিক গল্পের ভূত। কলকাতা শহরের ইতিহাসের খাঁজে খাঁজে মিশে থাকা ভূতুড়ে বাড়ির রহস্য আর সে সব ঘিরে গড়ে ওঠা গল্প, রাতের অন্ধকারে যেন বেশি ভয় সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন: Kareena Kapoor Khan: করিনার ‘না’ জাতীয় পতাকাকে! দিয়ার সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে বিতর্কে জড়ালেন অভিনেত্রী

এমন একটা রাতে ‘ভূত অভিযানে’ বেরোল ‘ভূতপূর্ব’ (Bhutopurbo) ছবির চার অভিনেতা-অভিনেত্রী। ভাঙাচোরা বাড়ি, পলেস্তারা খসে পড়েছে চারিদিকে। দোতলায় বড় বড় জানালা। এবং তার পর কী দেখলেন তারকারা। নতুন ছবির অভিযানের শুরু উত্তর কলকাতার পুতুলবাড়ি থেকে। তার পরে জোঁড়াসাকো ঠাকুরবাড়ি (Jorasanko Thakurbari), সেখান থেকে ‘সিরিয়াল কিলার’ (Serial Killer) ত্রৈলোক্যের বাড়ি থেকে কলকাতার ফাঁসি গলি কিছুই বাদ নেই। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন ভৌতিক গল্পে, কেউ আবার যুক্তিবাদী, কেউ সত্যি ভয় পান। তাই এমন নিশুতি রাতে কেউ সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছেন হনুমান চালিশা, কেউ আবার এলেন শুধু ইতিহাসের টানে। যদিও একটা বাড়ির সামনে এসে যেন থমকে গেল ঘড়ির কাঁটা, ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল শিরদাঁড়া দিয়ে। সেটা কি বাড়িটার হাড়হিম গল্পের জন্য?

কেউ মুখ খুললেন না। আহিরিটোলা ঘাটের কাছে ‘পুতুলবাড়ি’ দিয়েই হল শুরু ‘ভূতপূর্ব’ (Bhutopurbo)। আঠারোশো শতকের এই বাড়ির ছাদে ছিল অগুনতি পুতুল। যদিও পুতুলগুলো ভেঙেচুরে গিয়েছে। তবে ছাদের চূড়ায় মাথা নামিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মাত্র পুতুল। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। মূল দরজা বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মারলেন সবাই। সেই ব্রিটিশ যুগের বাড়ি দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারলেও সেই কালো অন্ধকার তবে নিমেষে চোখ সরিয়ে নিয়েছেন সবাই। এর পরের গন্তব্য জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। সঙ্গে ছিলে ট্যুর গাইড অভিজিৎ ধর (Abhijit Dhor)। তিনি ইতিহাস যেমন বলেছেন, তেমনই বার বার যুক্তি দিয়ে আলৌকিক কিছুর অস্তিত্বকেও অস্বীকার করেছেন। এমনিতেই ঠাকুরবাড়ির অনেক ইতিহাস, কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর থেকে বন্ধ তার ঘর। সকলের মুখে উঠে এসেছে উনিশ শতকের সাড়া জাগানো সেই ঘটনার প্রসঙ্গ। অনেকেই বলেন এই বাড়িতেই নাকি প্ল্যানচেট করতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। লালবাড়ির অন্দরের কথা নিয়ে সেই সময় যেমন উৎসাহ ছিল, এই প্রজন্মও ঠিক ততটাই উৎসাহী।

এর পর আর কোথাওই কেউ বিরতি নেননি তারা। রাত ১:১৫ নাগাদ রাজভবনের সামনে নিল একটু বিরতি। কিন্তু যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবাই, তাঁরা অনেকে জানতেন না তার ইতিহাস। রেড ক্রশ প্যালেস রোডকে অনেকেই ফ্যান্সি লেন বলেই চেনেন। ওই কালে এটাই পরিচিত ছিল ‘ফাঁসি গলি’। এখন যেখানে বড় বড় ইমারত উঠেছে সেখানেই এক কালে সারি দিয়ে গাছ ছিল। সেইকালে সেখানে ভারতীয়দের ফাঁসি দিত ইংরেজরা। এই ইতিহাস জানার আগের মুহূর্তে সবাই চা-কফি খেতে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু এর পর যেন খানিক নিস্তব্ধতা গ্রাস করল প্রত্যেককে। এই ‘ভূতপূর্ব’ (Bhutopurbo) ছবিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ তারানাথ তান্ত্রিকের (Taranath Tantrik) চরিত্রে দেখা যাবে সপ্তর্ষিকে (Saptarshi)। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমি যুক্তি দিয়ে সব কিছু বিচার করি। ভয় একেবারেই পাই না। তবে আমরা শুটিং করেছিলাম অজয় নদীর তীরে। উল্টো দিকে শ্মশান। রাতে কান্নার রোল উঠলে বুকে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হত।’’

শেষ গন্তব্য ডালহৌসি (Dalhousi) চত্বরে লালদিঘির বিপরীতে জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস)। এর পাশ দিয়ে কয়লা ঘাটা রোড। উল্টো দিকে রাইটার্স বিল্ডিং (Writer’s Building)। গাইড অভিজিৎবাবু এই রাস্তার ইতিহাস বোঝাচ্ছেন। সেখানে এক কালে ছিল কবরখানা। ব্রিটিশ আমলে যারা চাকরি করতে আসতেন এবং সেই সময় কলেরা, কালাজ্বরে মারা যেতেন, তাঁদের এইখানেই নাকি কবর দেওয়া হত। শুনে মুখের আকার খানিকটা বদলে গেল সুহোত্রর। এমনিতেই শহরের ইতিহাস নিয়ে বিশেষ উৎসাহ রয়েছে তার।

নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT

এদিকে, এই গল্প শুনতে শুনতে তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত ৩টে। অনেকে অবশ্য বাড়ি ফিরতে চাইছেন। এই চত্বরের গোটা ইতিহাস শুনেই বাড়ি ফিরবেন সুহোত্রর। সুহোত্রর কথায়, ‘‘শুনলাম জায়গাটাতে কবর দেওয়া হত। জানি না, কার কবরের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। তবে কলকাতার ইতিহাস আমার দারুণ লাগে। রাতে শহরটা হেঁটে দেখার অনুভূতিই অন্য রকম। তাও আবার এত রাতে প্রথম বার হাঁটলাম। ভয় যে পেয়েছি তেমন নয়। তবে ত্রৈলোক্যের বাড়ির সামনের চারপাশটা যেন সবটা খুব ভারী ছিল।’’ একই অভিজ্ঞতা আরও কয়েকজনের। রাতের অন্ধকার কেটে তখন ভোর হব হব। ইতিহাস আর অতিলৌকিক গল্পের ঝুলি নিয়ে যে যাঁর বাড়ির পথে। ভূতের খোঁজ মিলল কি না, কেউ জানেন না। তবে পৃথিবী অশুভ শক্তি যেমন আছে, তেমন ঈশ্বরের শক্তিও রয়েছে। আর এই বিষয়ে একমত হয়েছেন প্রায় সব তারকারাই।