ইসকন ছেড়ে বিষ্ণুপ্রিয়া এবং লক্ষ্মীপ্রিয়া চলল ভানতারায়

জেলা রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি,নদিয়া:- বন্য প্রাণীদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ১৮ বছরের বিষ্ণুপ্রিয়া এবং ২৬ বছর বয়সী লক্ষ্মীপ্রিয়া মায়াপুর ইসকনের দুই হাতি। এবার তাদের ঠাঁই হচ্ছে অনন্ত আম্বানি প্রতিষ্ঠিত ভানতারায়। গত বছরের এপ্রিলে বিষ্ণুপ্রিয়া হাতিটি তার মাহুতকে আক্রমণ করেছিল। ফলে তাকে অত্যাধুনিক প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ভানতারায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসকন কর্তৃপক্ষ।

ইসকনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব রয়েছে ভানতারার। এর ফলে এই পশু স্থানান্তর প্রকল্পটি ত্রিপুরা হাই কোর্ট কর্তৃক গঠিত এবং ভারতের সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক অনুমোদিত উচ্চ-ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিটি থেকে পূর্ণ অনুমোদন পেয়েছে। এক্ষেত্রে বিপদগ্রস্ত বন্য প্রাণীদের উদ্ধার এবং নিরাপদ, চাপমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাই ভানতারার অন্যতম দায়িত্ব। ভানতারায়, বিষ্ণুপ্রিয়া এবং লক্ষ্মীপ্রিয়া হাতি দু’টির প্রাকৃতিক আবাসস্থলের প্রতিরূপ তৈরি করে একটি স্থায়ী বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। শৃঙ্খলমুক্ত পরিবেশে বিশেষজ্ঞ পশুচিকিৎসকরা তাদের সেবা দেবে, যার মধ্যে রয়েছে মানসিক মূল্যায়ন এবং ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা, পুরষ্কার এবং অ-জবরদস্তিমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে আস্থা তৈরি করা।

মায়াপুরের ইসকন কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সাল থেকে লক্ষ্মীপ্রিয়া এবং ২০১০ সাল থেকে বিষ্ণুপ্রিয়াকে মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যবহার করত। পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস ইন্ডিয়া এবং ওয়ার্ল্ড অ্যানিম্যাল প্রোটেকশন-সহ প্রাণী সুরক্ষা সংস্থাগুলি ইসকনের হাতিগুলিকে একটি বিশ্বস্ত এবং বিখ্যাত হাতির যত্ন কেন্দ্রে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে ছিল। এমনকি পেটা ইন্ডিয়া এই স্থানান্তরের বিনিময়ে মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠানের জন্য একটি যান্ত্রিক হাতিও দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল মন্দির কর্তৃপক্ষকে। ইসকন মন্দিরের একজন বর্ষীয়ান সদস্যা তথা মায়াপুরের মাহুত এবং হাতির ব্যবস্থাপক হৃমতি দেবী দাসী বলেন, ‘ইসকনে আমাদের বিশ্বাস অনুসারে, প্রত্যেকেই তাদের বাইরের খোলস বা জড় দেহের ভিতরে একই আধ্যাত্মিক আত্মা। আমরা প্রজাতি বা বর্ণের মধ্যে কোনও পার্থক্য করি না। বিভিন্ন দেহের বিভিন্ন প্রকৃতি থাকতে পারে, তবে, প্রতিটি দেহের মধ্যে আত্মা করুণা এবং শ্রদ্ধার দাবিদার। প্রাণীদের সঙ্গে দয়া ও শ্রদ্ধার আচরণ করে, আমরা ভগবান কৃষ্ণের প্রতি আমাদের ভক্তি প্রকাশ করি। কৃষ্ণ আমাদের শিক্ষা দেন যে- প্রকৃত সেবা সমস্ত জীবন্ত প্রাণীকে রক্ষা এবং লালন-পালনের মধ্যে নিহিত। নিজে ভানতারা পরিদর্শন করার পর, আমি দেখেছি যে- আমি যে নীতিগুলিতে বিশ্বাস করি সেখানেও একই নীতি অনুসরণ করা হয়। আমি নিশ্চিত যে বিষ্ণুপ্রিয়া এবং লক্ষ্মীপ্রিয়া ভানতারায় ভাল থাকবে, শীঘ্রই নতুন বন্ধু তৈরি করবে এবং বন্য অঞ্চলে হাতিদের স্বাধীনতা এবং আনন্দ উপভোগ করে একটি পরিপূর্ণ জীবনযাপন করবে।’ এই পদক্ষেপটি ইসকনের পক্ষ থেকে প্রাণী সুরক্ষার একটি বড় উদাহরণ এবং অন্য সংস্থাগুলির জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।