সাতসমুদ্র তেরোনদীর পাড়ে বাগদেবী

আন্তর্জাতিক কলকাতা দেশ শহর

রাইমা রায় ,কলকাতাঃ- সূর্যোদয়ের দেশ জাপান, একটা সময়ে এখানেই পড়েছিল পরমাণু বোমা। আজ সেই জাপান সব দিক থেকেই গোটা বিশ্বকে রীতিমতো তাকে লাগিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার প্রসার যে পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে তাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই গিয়ে সেখানে আরও বড় ডিগ্রি অর্জন করছেন। আর বিশ্বের অন্যতম এগিয়ে যাওয়া প্রথম সারির জায়গা কানাডা, এই দুই জায়গার বিস্তৃতি সকলেই জানেন। আর এখানেই সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার পেড়িয়ে শিক্ষার আরও প্রসার ঘটাতে দেবী সরস্বতী পাড়ি দিলেন সুদূর কলকাতা থেকে জাপান, কানাডা আর আবুধাবিতে।

রাজ্যের শিক্ষার মান যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তাতে এখন থেকেই বাবা মায়েরা রীতিমতো চিন্তিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রথা মেনে হয়তো এবছরও হতে চলেছে বাগ্দেবীর আরাধনা গোটা রাজ্য জুড়েই, গোটা দেশ জুড়েই। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন কি পাড়ার কোনায় কোনায় সকলেই মেতে উঠবেন সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে। হয়তো, সকলে প্রার্থনা করবেন বাগ্দেবীর কাছে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কিন্তু তারপরেও হয়তো মনের আক্ষেপ নিয়েই বাগ্দেবী আজ পাড়ি দিয়েছেন সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে।

চাল ডাল নুন তেল থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিনকে দিন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। নেই কারুর কোনো ভ্রুক্ষেপ, নেই কোনো নজরদারি, তাই দিনে দুপুরেই চলছে চোখের সামনে কালোবাজারি। তবে কেবলমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রই নয় নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও। দুগাপুজো, কালীপূজো পার করে ওরা স্বপ্ন দেখেছিলেন দুটো পয়সা রোজগারের এই বাগ্দেবীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে, কিন্তু একদিকে নিজেদের কাজ অন্য দিকে রুজিরুটিকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদেই মাত্র তিনটে প্রতিমাকে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে পাঠিয়ে বজায় রাখতে পেরেছেন নিজের ঐতিহ্যটুকু। তাই হয়তো নামমাত্র লাভেই বাগ্দেবীকে পাঠাতে হল রাজ্য তথা দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে।

কুমোরটুলির বিখ্যাত মৃৎশিল্পী প্রশান্ত পাল জানালেন, পেটের তাগিদেই নিরুপায় হয়েই মা কে পাঠাতে হল বিদেশের মাটিতে, আশা করেছিলাম অন্তত এবার ভালোভাবে দুটো পয়সার মুখ দেখব কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে অগ্নিমূল্য বাজারের কারণেই এবারেও শিকে ছিঁড়লোনা আমাদের কপালে। আগামী দিন যে কিভাবে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবো সেই কথা ভাবতেই রীতিমতো আতঙ্ক যেন এখন থেকেই আমাদের পিছনে ধাওয়া করছে। কেবলমাত্র আমিই নই, অগ্নিমূল্য বাজারের কারণে আজ সব মৃৎশিল্পীদেরই একই অবস্থা। অগত্যা তবুও বাপ-ঠাকুরদার এই শিল্প এবং জাত ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখতেই আমাদের সকলকেই লড়ে যেতে হচ্ছে এতো প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। আর তাই কি সকলের এতো দুঃখ, দুর্দশা, জ্বালা, যন্ত্রণা ও বেদনাকে সহ্য করতে না পেরেই বাগ্দেবী পাড়ি দিলেন সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে? প্রশ্নটা থেকেই গেল সকলের কাছে। আগামীদিনে কি এই দশা থেকে মুক্তি পাবে কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীদের অপেক্ষা এখন শুধুই সময়ের।