নিউজ পোল ব্যুরো : কথা ছিল দেখা হবে, কথা ছিল বিয়ে হব। সিদ্ধান্ত অনেক আগে। কুম্ভমেলার হবে তাঁদের মিলনক্ষেত্র, কারণ শুধু দেশ নয়, গোটা পৃথিবীর মানুষ ১৪০ বছর পর এই মহাকুম্ভে অংশগ্রহণ করেছেন বা করবেন। সেটাই ছিল তাঁদের কাছে অন্যতম মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যকেই মাথায় রেখে তাঁদের জীবনের লক্ষ্যকে পূরণ করলেন গ্রিসের তরুণী পেনেলোপে ও ভারতের সিদ্ধার্থ। তাঁরা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই মহাকুম্ভতেই নতুন জীবন শুরু করবেন। শুধু অপেক্ষা ছিল সময়ের। তাঁদের উপস্থিতিতে স্থান-কাল নির্বিশেষে কুম্ভমেলার ক্ষেত্রেই হয়ে উঠলো তাঁদের মিলনক্ষেত্র।
উল্লেখ্য, মহাকুম্ভের পবিত্র মেলায় একটি অনন্য বিয়ের সাক্ষী হল বিশ্ব। ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে মহাকুম্ভে, যেখানে বৈদিক নিয়মে এক গ্রিক তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হল ভারতের সিদ্ধার্থের। এই বিয়েতে বিশেষ একটি ঘটনা ছিল—’কন্যাদান’, এই বিশেষ নিয়মটি পালন করলেন জ্যোতিন্দ্রনন্দ গিরি, জুনা আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর। বহির্বিশ্বের মেলবন্ধনে ভারতীয় সংস্কৃতি ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে। এর এক মূর্ত উদাহরণ গ্রিসের পেনেলোপ এবং ভারতের সিদ্ধার্থের বিয়ে। পেনেলোপ, যিনি একজন গ্রিক নাগরিক, বহু বছর ধরে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা এবং সংস্কৃতি নিয়ে গভীর আগ্রহী ছিলেন। সিদ্ধার্থ, একজন ভারতের সন্ন্যাসী এবং আধ্যাত্মিক নেতা, যিনি সম্প্রতি বৈদিক নিয়মে আচার পালন করে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করেছেন।
পেনেলোপ ভারতীয় দর্শন ও যোগবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হন। সিদ্ধার্থের সঙ্গে পরিচয়ের পর তাঁদের মধ্যে গভীর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়। দীর্ঘদিন একে অপরকে জানার পর, তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মহাকুম্ভ মেলা, যা বিশ্বব্যাপী আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, এমন একটি জায়গা যেখানে ভারতের পুরনো ঐতিহ্যগুলি নতুন প্রজন্মের কাছে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিয়ের সমস্ত আয়োজন ছিল বৈদিক রীতিতে। বিয়ের পূর্ণাঙ্গ আচার অনুসরণ করে, গায়ে হলুদ, মেহেন্দি এবং অন্যান্য বৈদিক আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
অধ্যাপক এবং ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু শ্রীশ্রী রবিশঙ্কর, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁদের বিয়েতে আশীর্বাদ প্রদান করেন এবং সারা জীবন সুখী দাম্পত্যের জন্য শুভ কামনা জানান। এই বিয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল কন্যাদান, যা সম্পন্ন করেছিলেন জুনা আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর জ্যোতিন্দ্রনন্দ গিরি। জ্যোতিন্দ্রনন্দ গিরি মহামণ্ডলেশ্বর হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব।
মহাকুম্ভে এই ধরনের একটি বিয়ের আয়োজন ভারতের আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাফল্য। এটি বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে দেয় যে, প্রাচীন ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একটি সুন্দর সংযোগ সম্ভব। গ্রিসের পেনেলোপ এবং ভারতের সিদ্ধার্থের বিয়ে শুধুমাত্র একটি পারিবারিক সম্পর্ক নয়, এটি এক মহামিলনের ঘটনা যা বৈদিক নিয়মের প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা ও আগ্রহের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।