মৃণালকান্তি সরকার, কলকাতা: ২০২১ সালের আগস্ট মাসে শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। ওই বছরই বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে তিনি শুরু করবেন এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। আর সেই মতোই ক্ষমতায় এসেই আগস্ট মাসে ই তিনি রূপায়ণ করেছিলেন এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে এবং ১৩,৫২৩’৪৪ কোটি টাকা বিগত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে। ২০২১ সালের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রূপায়িত এই প্রকল্পকে দেখে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন নামে শুরু হয় একই ধরনের এই প্রকল্প। কিন্তু ধরণ একই থাকলেও বিভিন্ন শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় এই প্রকল্পে। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের মতো অন্য রাজ্যের মহিলারা এই সুবিধা গ্রহণ করতে এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ রয়েছেন বলে শুক্রবার বিধানসভায় জানান নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোন আপত্তি নেই অন্য রাজ্য যদি আমাদের এই প্রকল্পকে অনুকরণ করে তাদের রাজ্যের মহিলাদেরও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু এই রাজ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে একটাই মাত্র শর্ত যেখানে বলা হয়েছে২৫ বছর বয়স থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এই প্রকল্পের অধীনে মহিলারা থাকতে পারবেন। অবশ্যই সেখানে সরকারি কর্মচারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না। কিন্তু এর বাইরে রাজ্যের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আর কোন শর্তই আরোপ করা হয়নি বরং চলতে আর্থিক বছরে আরও পাঁচ লক্ষেরও বেশি নাম নথিভুক্তকরণ এরই মধ্যে হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি যাদের বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে তাঁদের বয়স্ক ভাতা হিসেবে অন্য প্রকল্পে নাম চলে যাবে, যা এই মুহূর্তে ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৭৬ জন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প থেকে বয়স্ক পেনশন ভাতা প্রকল্পে প্রবেশ করেছে। অধিবেশনে তিনি জানান এই প্রকল্প রূপায়ণের শুরু থেকেই এখনো পর্যন্ত বিরোধীরা বারবার বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আসছেন কিন্তু আদপে কোনোভাবেই এই প্রকল্পকে বন্ধ করতে পারছেন না। অন্যদিকে, গোটা দেশের কাছে একটা নজিরবিহীন প্রকল্প হিসেবেই আজ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সকলের কাছে এক আইকন হিসেবে তৈরি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বিধানসভায় জানিয়েছিলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে যারা নতুন ভাবে নাম নথিভুক্ত করতে চান তাঁদের যেন কোনও অসুবিধা না হয় সেই নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সব রকম সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক সমালোচকরা ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচন পার হতেই বলেছিলেন রাজ্যের মানুষ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকেই মান্যতা দিয়েছে আর তাই বিপুল সংখ্যক সিট নিয়ে রাজ্যের শাসক দল কংগ্রেস ২৯ টি সিট জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে, বিজেপির বক্তব্য রাজ্যে তারা ক্ষমতায় এলে এই এক হাজার টাকাকে বাড়িয়ে তারা ৩হাজার টাকা করবে। কিন্তু যেভাবে দিনের পর দিন রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতাকে বাড়িয়ে তুলছে তাতে আগামী দিনে অর্থাৎ ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের বিরোধীরা কতগুলো আসন জয়লাভ করে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তবে আগামী দিনে যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে কোনরকম অসুবিধার কোন রাস্তা থাকবে না সে কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শশী পাঁজা।