নিউজ পোল ব্যুরো: নীরবতায় জন্ম নেয় যাঁর বিপ্লব, করুণায় যাঁর শক্তি, সেই মহামানবের নাম মহাবীর। রাজকীয় জীবনের মোহ ত্যাগ করে যিনি বেছে নিয়েছিলেন আত্মসংযমের কঠিন পথ, সেই তপস্বী আজও মানবজাতির পথপ্রদর্শক। আজ ১০ এপ্রিল, দেশের বিভিন্ন অংশে পালিত হচ্ছে মহাবীর জয়ন্তি (Mahavir Jayanti 2025)। জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি সর্বোচ্চ পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। জৈন ধর্ম (Jainism) অনুযায়ী, মহান আধ্যাত্মিক গুরু মহাবীর (Lord Mahavir) ছিলেন ২৪ জন তীর্থঙ্করের (Tirthankara) মধ্যে সর্বশেষ। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে (Chaitra Shukla Trayodashi) তাঁর জন্ম হয়েছিল। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই দিনটি সাধারণত মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে কোনও একদিনে পড়ে।

মহাবীরের জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫৪০ বছর আগে। তাঁর জন্মস্থান ছিল বিহারের বৈশালী এলাকার এক রাজ পরিবারে। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন রাজকুমার, তবে মাত্র ৩০ বছর বয়সেই তিনি সমস্ত রাজকীয় বৈভব ও আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে বেছে নেন সন্ন্যাসের পথ।রাজত্ব ও সম্পদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার পর শুরু হয় তাঁর আধ্যাত্মিক অন্বেষা। প্রায় সাড়ে ১২ বছর ধরে কঠোর তপস্যা ও ধ্যানের মাধ্যমে তিনি অশেষ জ্ঞান ও আত্মবোধ লাভ করেন। শোনা যায়, এই দীর্ঘ সাধনার সময়ে তিনি মাত্র ৩৪৯ বার আহার গ্রহণ করেছিলেন। এই কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন প্রাতঃস্মরণীয় তীর্থঙ্কর।
আরও পড়ুন:- Ram Navami: কাকতালীয়? অকাল বোধনের প্রবক্তা শ্রীরামের জন্মের সঙ্গেও যোগ দুর্গাপুজোর!
মহাবীরের মূল শিক্ষা (Teachings of Mahavir)
মহাবীরের জীবনদর্শন ও শিক্ষার মূল ভিত্তি ছিল আত্মসংযম এবং অহিংসা। তিনি যে পাঁচটি মূল ব্রত প্রচার করেছিলেন, তা আজও জৈন ধর্মের ভিত্তিপ্রস্তর:
অহিংসা (Ahimsa) – কোনও জীবের ক্ষতি না করা এবং সকলের প্রতি প্রেম ও দয়া প্রদর্শন।
সত্য (Satya) – সর্বদা সত্য কথা বলা এবং সত্য পথ অনুসরণ করা।
অস্তেয় (Asteya) – চুরি না করা বা অন্যের জিনিস অন্যায়ভাবে গ্রহণ না করা।
ব্রহ্মচর্য (Brahmacharya) – ইন্দ্রিয়সংযম এবং শুদ্ধ জীবনযাপন।
অপরিগ্রহ (Aparigraha)– জাগতিক আসক্তি পরিহার এবং সম্পত্তির প্রতি আকর্ষণ ত্যাগ।
এই পাঁচ ব্রত (Five Vows) আজও বহু জৈন অনুগামীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

জৈন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাবীর ৭২ বছর বয়সে মোক্ষ (Moksha) লাভ করেন—অর্থাৎ তিনি জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পান (Mahavir Jayanti 2025)। তাঁর জীবনটাই হয়ে ওঠে এক মহান আধ্যাত্মিক বার্তা। ভারতে জৈনদের সংখ্যা এক কোটিরও কম হলেও তাঁদের প্রভাব দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্পষ্ট। শিক্ষা, বৃত্তি, ব্যবসা এবং সমাজসেবা—এই সব ক্ষেত্রে জৈনরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। বিশেষত শিক্ষাক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদানের প্রথা জৈন সমাজে বহু পুরনো এবং তা আজও প্রচলিত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অন্যান্য সম্প্রদায়ের তুলনায় জৈনদের মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা বেশি। শুধু ভারত নয়, উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ ছড়িয়ে রয়েছেন, এবং তাঁরা সগৌরবে এই পবিত্র দিনটি উদযাপন করেন।
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT

মহাবীর জয়ন্তীর রীতিনীতি ও উদযাপন (Mahavir Jayanti Celebration)
এই দিনটিতে জৈন মন্দিরগুলো বিশেষভাবে সজ্জিত হয়। মহাবীরের মূর্তিকে কেন্দ্র করে বের করা হয় রথযাত্রা (Procession), যা পথে পথে ভক্তদের ভজন, গান, ও ধর্মীয় উপদেশের মাধ্যমে জৈন ধর্মের বার্তা প্রচার করে। অনেক জায়গায় ধর্মসভা, সেমিনার এবং দান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জৈন ধর্মে খাদ্যগ্রহণও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মহাবীর জয়ন্তীর (Mahavir Jayanti 2025) দিনে জৈনরা সম্পূর্ণ নিরামিষ এবং অহিংস খাদ্য গ্রহণ করেন। খাদ্য থেকে পেঁয়াজ, রসুনের মতো মূল জাতীয় সবজি বর্জন করা হয়, কারণ এগুলি মাটির নিচে জন্মায় এবং তুলনামূলকভাবে জীবহানির সম্ভাবনা থাকে।