নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা হাই কোর্টের বিশেষ তৃতীয় বেঞ্চে নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবিরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জামিনের মামলায় আজ মঙ্গলবার শুনানি শেষ করলেন বিচারপতি। রায়দান স্থগিত থাকবে। কারণ মূল দুর্নীতির তদন্ত এখনও চলছে। কিন্তু এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়েছে বলে আদালতে জানান তদন্তকারী আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, কলকাতা হাই কোর্টের বিশেষ তৃতীয় বেঞ্চে নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবিরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের জামিনের মামলার শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হওয়ায় মামলা আসে তৃতীয় বেঞ্চের কাছে। এরপর থেকে তা বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে চলছে মামলার শুনানি |
সিবিআই আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী বলেন, এরা প্রত্যেকেই নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। নিজেদের ক্ষমতায় দুর্নীতি করেছে। এদের জামিন দিলে প্রমাণ লোপাট করতে পারে। সাক্ষীদের ভয় দেখাতে পারে। তখন তদন্ত চালিয়ে যাওয়া মুস্কিল হবে। শান্তিপ্রসাদ ও অশোক সাহা কোন কোন স্কুলে এই ক্যান্ডিডেটরা চাকরি করবে তা নির্বাচন করে তালিকা তৈরি করে।
বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ করা হয়। ওই তালিকায় যারা টাকা দিয়েছেন তাঁরাই নিয়োগ পেয়েছেন। ওএমআর শিট ম্যানিপুলেশন করে ওই লিস্ট তৈরি হয়ছে। প্রথম নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অপরাধ করা হয় ওএমআর শিট বিকৃতি ও নথি নষ্ট করে দেওয়ার মাধ্যমে। দ্বিতীয় অপরাধ করা হয় যখন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মেধা তালিকায় সময়সীমা অতিক্রান্ত হবার পর নিয়োগ করা হয়। এই তালিকাটি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে। এটা গভীর ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র করে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এই শিক্ষকরা সমাজের মেরুদন্ড তৈরি করেন!
তাঁর বক্তব্য শুনে বিচারপতি বলেন, আদালতকে জানাও কেন এই আবেদনকারীদের এখনও জেলে রাখা প্রয়োজন? প্রায় তিন বছর হল। অপূর্ব সিনহা রায় যে কারণে মনে করছেন এদের জামিন পাওয়া ঠিক হবে না সেটা তোমার তদন্তে কিসের প্রয়োজন আদালতকে জানাও। প্রভাবশালীর অভিযোগ এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সিবিআই আইনজীবী বলেন, সামাজিক এবং আর্থিক অপরাধের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক অধিকার প্রাধান্য পায় না। এখানে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ করা হয়েছে। সেটা সামাজিক অপরাধ। সব সময় অপরাধকে প্রমাণ করার জন্য নথির প্রয়োজন হয় না। কখনও কখনও সাক্ষীদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। অবৈধ নিয়োগপত্র যাচাইয়ের জন্য বিভাগীয় কর্মচারীদের সাক্ষ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে সুবিধা নিচ্ছে অভিযুক্তরা। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন এরা বাইরে থাকলে সাক্ষীদের ওপর প্রভাব ফেলে তদন্তের কাজে বাধা পড়বে।
বিচারপতি: সিবিআই কেনো ভাবছে জামিন পেলে এরা বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবেন?
সিবিআই আইনজীবী: এদের যা প্রভাব আছে তাতে প্রভাব খাটাতেই পারে। তদন্ত এখনও চলছে। নির্দিষ্ট আদালতে সব তথ্য প্রমাণ তুলে দেওয়া হচ্ছে। এদের জামিন দিলে পুরো তদন্তের ক্ষতি হবে। আর আমাদের দেশের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সারা দেশের কাছে যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এর পাশাপাশি এদিন ফের বিচারপতি ফের নিয়োগ প্রক্রিয়া মামলায় সরকারি কর্মচারীদের সরকারি অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। কেনও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না যার জন্য বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে? মুখ্যসচিব কেনও সময় নিচ্ছেন অনুমোদনের জন্য?
পার্থ চটটোপাধ্যায় আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, এটা আমার জানা নেই। কারণ অভিযুক্তরা এতে সাফার করছে। ২০১৯ নলিনী চিদাম্বরমের মামলা এখনও পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। তারা এখনও বলছে তদন্ত চলছে। সুতরাং সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে সকলের প্রশ্ন রয়েছে।
আইনজীবী শেখর বসু বলেন, বিষয়টি সরকার ও সিবিআইয়ের মধ্যে ব্যাপার। এবিষয়ে আমরা আলোকপাত করতে পারি না। তবে তদন্ত এখনও চলছে কি না সেটা আমার জানা নেই।
বিচারপতি: আপনার কি মত তদন্ত চলছে কি না?
শেখর বসু (অশোক সাহার আইনজীবী): সিবিআই বলছে তদন্ত এখনও চলছে। কিন্তু তদন্ত চলছে এমন কোনও নথি আমার জানা নেই। সেই কারণে আবেদনকারীকে আটকে রেখে কি লাভ? জামিন দেওয়া হোক।
সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়: আবেদনকারীরা প্রত্যেকে ৭০ বছরের বেশি বয়স। একমাত্র সুবিরেশ ভট্টাচার্য বয়স ৬৭। সুতরাং এর জামিন পেলে পুনরায় সরকারি কোন পদে আসীন হবে এবং সেই ক্ষমতা থেকে নথি নষ্ট করবে এমন সম্ভাবনা আর নেই। একই ভাবে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জামিন পেয়েছেন এই শর্তে যে সে কোনও সরকারি পদে আসিন হতে পারবেন না। সব পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে আজ রায়দান স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি।