বেলুড় মঠের প্রতিষ্ঠা দিবস

জেলা রাজ্য সংস্কৃতি

নিউজ পোল ব্যুরো: পৌষ মাসের শেষ দিন। মকর সংক্রান্তি। সাল ১৯৩৮, ১৪ জানুয়ারি। বেলুড় মঠের শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরে শ্রীঠাকুরের মর্মর মূর্তিতে পরম পূজ্যপাদ স্বামী বিজ্ঞানানন্দজী মহারাজ (শ্রীশ্রীঠাকুরের সন্ন্যাসী শিষ্য, সঙ্ঘাধ্যক্ষ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন) শাস্ত্রীয় নিয়মে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। শুভ উদ্ঘাটন হয় বর্তমানের মূল শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরের দ্বার সর্বসাধারণের জন্য।

এই মন্দিরের নকশাটি স্বামী বিজ্ঞানানন্দজী মহারাজ তাঁর গাঢ় অধ্যাবসায় দিয়ে করেছিলেন এবং স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং সেটি দেখে মুগ্ধ হয়ে সানন্দে অনুমোদন করেছিলেন। বলাবাহুল্য, বর্তমান মন্দিরের আগের সাতটি নকশা বিজ্ঞানানন্দ মহারাজ স্বামীজীকে দেখান এবং মনোনীত না হওয়ায় যেগুলি স্বামীজী নাকচ করে দিয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের ইচ্ছে ছিল মন্দিরটির মধ্যে সব ধর্মের চিহ্ন থাকবে। শ্রীরামকৃষ্ণের ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মসমন্বয় প্রতিফলিত হবে মন্দির গাত্রে। অবশেষে এই বর্তমান মূল মন্দিরের নকশা দেখে স্বামীজী সন্তুষ্ট হন ও আনন্দ মনে অনুমোদন করেন।

তবে স্বামীজী চিহ্নিত স্থানে মন্দির তৈরী করা যায়নি। সামান্য সরে জমি নির্বাচন করা হয়। মন্দিরে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য শিল্পকলার ছাপ আছে একইসঙ্গে। শুরু হয় মন্দির তৈরীর কাজ। কাজের দায়িত্ব নেয় কলকাতার মার্টিন বার্ণ কোম্পানি। ব্যয় হয় প্রায় আট লক্ষ টাকা। এই অর্থের অধিকাংশ বহন করেছিলেন দুজন ভক্ত। তাদের নাম – মিস্ হেলেন রুবেল ও মিসেস আন্না উরষ্টার। জানা যায়, শ্রীশ্রীঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনে বিজ্ঞানানন্দ মহারাজ মূর্তি প্রতিষ্ঠার পরে ওপরের দিকে হাত জোর করে বলেন, “স্বামীজী দেখুন, আপনার ইচ্ছা অনুসারে ঠাকুর আজ এই মন্দিরে এসে বসেছেন।” পরে তিনি ভাবাবেগে সবাইকে জানান যে স্বামীজী, মহাপুরুষ মহারাজ ও ঠাকুরের অন্যান্য পার্ষদদের অনেকেই সেদিন সূক্ষ্মশরীরে সেই সময় গর্ভমন্দিরে মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় উপস্থিত ছিলেন। মূর্তি প্রতিষ্ঠার সময় শুধু গর্ভমন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ মন্দির তৈরি হয়। শ্রীশ্রীঠাকুরের মূর্তিটি নির্মাণ করেছিলেন ভাস্কর গোপেশ্বর পাল, এটি তাঁর অনেক সাধনার ফসল। মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণের সামনে দিকের ছবিটুকুই ছিল তাঁর সম্বল, তিনি রামকৃষ্ণের চর্মচক্ষে দর্শন পাননি, মানসলোকে শ্রীরামকৃষ্ণ বিচরণ করেছেন তাঁর। মূর্তিটি তাই এত নিখুঁত। সেই অভিযাত্রা শুরু এবং সেই অভিযাত্রা এখনও চলমান…