নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অবশেষে পাঁচ মাস দশ দিন পর আরজি কর কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হলে সঞ্জয় রাই। আজ শনিবার শিয়ালদহ আদালতে আরজিকর হত্যাকাণ্ড ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। আগামী সোমবার দুপুর ১২টায় সাজা ঘোষণা হবে।
এত বছর বঙ্গে যে সময় ঠান্ডায় লোকে কাঁপতে থাকে শনিবার উল্টো চিত্রটাই দেখা গিয়েছিল সকাল থেকেই। কেউ কেউ বলেই ফেললেন আজ যে রায় ঘোষণা হবে তার কারণে গোটা বাংলা উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছে। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলতে যে কথা বোঝায় শনিবার কাকভোর থেকেই গোটা শিয়ালদা চত্বর নিরাপত্তার জালে মুড়ে ফেলেছিল কলকাতা পুলিশ। সাদা পোশাক থেকে উর্দিধারী, কনস্টেবল থেকে ডেপুটি কমিশনার এদিনের নিরাপত্তায় বাঁধ যায়নি কেউ। বড় ধরনের কোনও বিপত্তি যাতে না ঘটে তাই আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল কলকাতা পুলিশ। RAF থেকে জল কামান ফায়ার ব্রিগেড অ্যাম্বুলেন্স বাদ যায়নি কোনও কিছুই । অন্য আর পাঁচটা দিনের মতোই ট্রেনের হুইসেল শোনা গেলেও শোনা গেল না এদিন পাখিদের কোনও কলতান। তারপরেও বেলা যত বেড়েছে দূর দূরান্ত থেকে শুরু করে শহর কলকাতার মানুষ যাঁদের আজ সকলেরই অভিমুখ ছিল শিয়ালদা আদালত চত্বর।
শনিবার ফের বাংলার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো। শনিবার শিয়ালদা আদালতে সঞ্জয় রাইকে তোলা হলে বিচারক বলেন, ‘সঞ্জয় রাই আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আপনি ওইদিন ৪টের পর ঢুকেছিলেন। একজন অন ডিউটি ডক্টরকে গলা মুখ চেপে ধরেন। তাঁর ওপর সেক্সউয়াল অ্যাসল্ট করেন। আপনার বিরুদ্ধে ৬৪, ৬৬, ১০৩(১) ধারায় চার্জ ফ্রেম হয়। সাক্ষী ও তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে আপনাকে দোষী সব্যস্ত করা হচ্ছে। ৬৪ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। ৬৬ ধারা আপনি ধর্ষণের সময় এমন আঘাত করেছিলেন যাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এতে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। আপনিও যেভাবে মেরেছেন তাঁর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আপনি কি চাইছেন?
তার পাল্টা সঞ্জয় বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। আমি দোষী হলে তা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কিন্তু তা তো হয়নি। আপনিও বুঝতে পারছেন আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’
তারপরেই বিচারক বলেন, ‘আমার যা পর্যবেক্ষণ সিবিআই যা দিয়েছে তাঁরা সমস্ত কিছু প্রমাণ করেছে। তাতে আপনাকেই দোষী বলে মনে করছি। আপনাকে আজ জেলে পাঠালাম। সোমবার আপনাকে ডাকা হবে আপনার কথা শুনবো।’
ফের সঞ্জয় বলেন, ‘আমি তো গরীব। আমি তো এটা করিনি। যারা করেছে তাদের কেন ধরা হচ্ছে না।’
এছাড়াও এদিন আদালতে কেঁদে ভাসালেন নির্যাতিতার বাবা-মা। কিন্তু তারপরেও এখনও আশ মেটেনি রাজ্যবাসীর। যাঁরা রাত দখল থেকে শুরু করে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছিলেন এবং পথে নেমেছিলেন। তাঁদের দাবি একা সঞ্জয় রাই নয়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরও অনেকে। যদিও নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের তরফের আইনজীবী জানিয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে যে ৬৪ টি দাবি জানানো হয়েছিল তার কয়েকটি দাবির উল্লেখ এ দিন বিচারক করেছেন বাকিগুলি তার রায়ের সঙ্গে তিনি জানাবেন বলে আজ আদালতে জানিয়েছেন। ভাই তাঁরা আশাবাদী যে তাদের প্রশ্নের জবাব তাঁরা পাবেন।
অপরদিকে সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী জানান তদন্ত এখনো চলছে। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়নি আগামী দিনে তদন্তের ভিত্তিতে যদি আরও কাউকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, তাহলে সেখানে তা উল্লেখ করা হবে। তাঁদের তরফ থেকে দোষী সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানানো হয়েছে।