নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হম্বি তম্বিই সার। আদপে ভোটের ময়দানে যে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের মানুষের কাছে তাঁরা তাঁদের নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে তা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল রাজ্যের ছয় উপনির্বাচনের ফলাফলেই। রাজ্যের শাসক বিরোধী ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দলই তাঁদের জামানত ধরে রাখতে পারলো না। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী কোনো নির্বাচনের মোট যত ভোট পড়েছে তার থেকে বাদ যাবে নোটার ভোট। এরপর সেই ভোটের একের ছয় ভাগ ভোগ ওই সংশ্লিষ্ট দল বা প্রার্থী না পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
আর শনিবার সকাল থেকে গণনা শুরু হতেই দেখা যায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ঝড়ের গতিতে এগোতে শুরু করে এবং সেই ধারা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয় রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রেই। এর পাশাপাশি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি লড়াই করলেও তাঁরা কোনও সিটেই জয়লাভ করেনি কিন্তু তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়নি। অন্যদিকে, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা তাঁদের জামানত ধরে রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। হাড়োয়ায় আইএসএফ তাদের জমানত বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ কিনা বামফ্রন্ট কংগ্রেস রাজ্যের মাটিতে দাঁড়িয়ে যতই বড়বড় কথা বলুক না কেন আদপে রাজ্যের মানুষের মন জয় করতে পারেনি তাঁরা। তাই খুব সহজেই বলা যেতে পারে আরজি কর কাণ্ডের ছায়া থেকে শুরু করে ইডি সিবিআই তদন্তের কোনো ছাপ যে পড়লো না রাজ্যের এই ছয় বিধানসভার উপনির্বাচন তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
আরজি কর কাণ্ডকে ঘিরে গোটা রাজ্যে যে পরিস্থিতি হয়েছিল তাতে প্রায় সকলেই মনে করেছিলেন এবার বুঝি নির্বাচনে এর একটা বড় ধাক্কা লাগবে। কিন্তু একদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরেই যে রাজ্যের মানুষ ভরসা রাখেন তা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল। এখন দেখার রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবার কোন পন্থাকে অবলম্বন বা ব্যবহার করে শাসকের বিরুদ্ধে পথে নামবে। তার কারণ মাদারীহাটের যে সিটে এবার তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করেছে সেই সিটে এতোদিন বিজেপির একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কিন্তু এবারের উপ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস খাতা খুললো। শুধু খাতা খোলাই নয় নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা যে রাজ্যের মানুষের কাছে বাড়াতে তাঁরা ফের যে আরও একবার সক্ষম হয়েছে তা কিন্তু আজকের ফলাফলই বুঝিয়ে দেয়। ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কে বড় হাতিয়ার করেই নিজেদের বৈতরণী পার করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এবারের উপ নির্বাচনে যে ফল হল তাতে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে তা কিন্তু একটা বড় সত্যি আজ মানুষের সামনে এলো। আর এখান থেকেই এবার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কতটা শানিয়ে তুলতে পারে সেটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন।