মৌমিতা সানা, হাওড়া
স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম সবই রয়েছে শুধু নেই যাতায়াতের রাস্তা। জীবন ঝুঁকি নিয়েই রেললাইনের ওপর দিয়ে চলে যাতায়াত। কেটেছে প্রায় দুই যুগের বেশি তবুও সুরাহা হয়নি আজও। প্রায় ৩০ বছর ধরে আতঙ্ক সঙ্গে নিয়েই প্রবেশ করতে হয় স্টেশনে।আস্ত একটি রেল স্টেশন, যদিও নেই স্টেশনের প্রবেশপথ।
নামে স্টেশন হলেও নেই পর্যাপ্ত ও সঠিক প্রবেশ পথ, প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে মনে হয় যেন কোনও এক ভুতুড়ে স্টেশন। তবু উপায় নেই বলেই অগত্যা দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই করতে হয় লাইন পারাপার। রেল লাইন দিয়ে হেঁটেই পৌঁছতে হয় টিকিট কাউন্টারে। যাত্রী সুরক্ষা, লাইন ধরে যাত্রীদের হাঁটা-চলা বন্ধ করতে দেশ জুড়ে, রাজ্য জুড়ে সচেতনতার কর্মসূচি পালন করলেও, হাওড়ার এই স্টেশনকে যেন কার্যত ভুলেই গেছে ভারতীয় রেল।
হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের ঝালুয়ারবেড় পার হয়ে বড়গাছিয়ার আগেই আসে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দক্ষিণবাড়ি রেল স্টেশন। স্টেশনে নেই টিকিট কাউন্টার, নামের ফলক থাকলেও নেই স্টেশনে ঢোকার কোনও সুব্যবস্থা। জন-বসতি থেকে প্রায় ৮-১০ ফুট চড়াই পেরিয়ে রেল লাইন ধরে হেঁটেই ঢুকতে হয় স্টেশনে। হাওড়া স্টেশন থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত এই স্টেশনটি যার নাম দক্ষিণ বাড়ি রেলস্টেশন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘ তিরিশ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এই সমস্যার কোনও সমাধান তাঁরা পাননি। পরিস্থিতি এমনই সন্ধ্যা ৭ টা বাজলে এই স্টেশনে কেউ আসেন না। টিকিট কাউন্টারও বন্ধ হয়ে যায়। এক রেল যাত্রী গৌতম দাস জানান, ‘আমি দশ বছর ধরে এখানে কর্মসূত্রে আসছি। এখানে স্টেশন থাকলেও ঢোকার রাস্তা নেই। সকলকেই লাইনের ওপরে হেঁটে যেতে হয়। এতে অনেক সময় পেছন থেকে ট্রেন চলে আসার ঘটনাও ঘটে। বহুদিন ধরে রাস্তা তৈরির কথা শুনলেও কিছুই হয়নি।’
এ বিষয়ে, স্থানীয় বাসিন্দা তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, চাষবাস করে দিন চলে। ট্রেনে আমতায় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাই। এই স্টেশনে কোনও রাস্তা নেই। নিচ থেকে হেঁটে উঠতে খুব কষ্ট হয়। বয়স হয়েছে , এই পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে খুবই কষ্ট হয়। এখানে একটা রাস্তা হলে টিকিট কেটে স্টেশনে চলে আসতে পারবো, এতে সকলের উপকার হবে।’
যদিও এই বিষয় নিয়ে ওই স্টেশনের দেবা বৈদ্য নামে এক কর্মচারীর (কমিশন এজেন্ট) কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননি। তিনি যথেষ্টই অসহযোগিতা ও দুর্ব্যবহার করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন সময়ে কাজের জন্য রেলের আধিকারিকরা এলেও তাঁদের সমস্যা সমাধানের কোনও উপায় পাচ্ছেন না। কি ভাবে এই সমস্যা মিটবে এখন সেটাই বড় প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে রেল যাত্রীদের।