বড়ির বিয়ে, হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার এই ঐতিহ্য

জেলা বিনোদন

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শীতকালীন পিঠে খাওয়া বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীতকাল মানে যেমন বলেন গুড় , সঙ্গে পিঠে, ঠিক তেমনই শীতকালে বাংলার সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে বাড়িতে বাড়িতে বড়ি দেওয়ার চল দীর্ঘদিনের। কনকনে শীতে বাংলার সমস্ত প্রান্তেই বিভিন্ন রীতি রেওয়াজের সঙ্গে বড়ি দেওয়ার প্রচলন আছে। আর এই বড়ি কালো বিউলি বা কালো কলাই ডাল থেকেই সবচেয়ে ভালো হয়। বাজারে সাদা কলাই বা বিউলির ডাল পাওয়া যায়, সেই ডাল দিয়েও বড়ি বানানো যায় তবে স্বাদে গন্ধে কালো বিউলি বা কলাইয়ের বড়ি অসাধারণ। রাত থেকেই চলে এই বড়ি দেওয়ার কাজ।

রাতে কালো বিউলি বা কলাই ডাল যাঁতা ( দু’টি পাথরের চাকতির মাঝখানে ছিদ্র করে এটি তৈরি) ভাঙা হয়। তারপর সেই ভাঙা ডাল জলে ভিজিয়ে রেখে চটের বস্তার ওপর ঘষে ঘষে কলাইয়ের খোসা ছাড়ানো হয়। এর পর রাত থেকে জলে ধুয়ে সেই কলাই ভিজিয়ে রাখা হয়। পরের দিন পরিষ্কার করে শিলে সেই কলাই বাটা হয়। এছাড়াও বড়ি দেওয়ার আরও একটি উপকরণ রয়েছে। উপকরণ হল পাকা চালকুমড়ো, এই চালকুমড়ো কুড়ানো হয়। কুড়িয়ে নিয়ে জলে ধুয়ে নিয়ে তা থেকে জল ঝরিয়ে নিতে হয়।

চালকুমড়োর বিজ গুলো আলাদা করে রাখতে হয়। সেই বীজ গুলো দিয়ে বীচবড়ি তৈরি হয়। বাটা ডাল ও কুড়ানো চালকুমড়ো পরিমাণ মত মিশিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিয়ে নেট এর ওপর বড়ি বসাতে হয়। এই বড়ি বসানোর কাজটি গ্রাম বাংলায় বেশ আচার আচরনের মাধ্যমে করা হয়। শুদ্ধ কাপড়ে, শুদ্ধ আচারে এই কাজ বাড়ির মা-বোনেরা করে থাকেন। অনেক স্থানে বড়ির বিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে দেওয়া বড়ি দু’টিকে বর-বউ সাজিয়ে ধান দূর্বা দিয়ে বড়ির বিয়েও দেওয়া হয়। ছোটো সাইজের কিছু বড়ি দেওয়া হয় ভাজা খাওয়ার জন্য। মশলা দিয়ে কিছু বড়ি দেওয়া হয়।

বিভিন্ন ধরনের বড়ির প্রচলন আছে বিভিন্ন জেলায়। মেদিনীপুর জেলায় গয়না বড়ির প্রচলন আছে। গয়না বড়ি দেখতে খুবই সুন্দর হয়। তবে অত্যাধুনিক মেশিন আসার কারণে বড়ি দেওয়ার এই সংস্কৃতি ধীরে ধীরে বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হয়ত এমন একদিন আসবে যখন ভবিষ্যত প্রজন্ম কেবল বইয়ের পাতাতেই পড়তে পারবেন বড়ি দেবার পদ্ধতি।