টালিগঞ্জে মহিলার মুণ্ডু উদ্ধারে ধৃত জামাইবাবু

কলকাতা শহর

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টালিগঞ্জের গ্রাহামস লেনের জঞ্জাল স্তূপে উদ্ধার হওয়া মহিলার কাটা মুণ্ডুর কিনারা করল পুলিশ। বিশেষ তদন্তকারী দল সিট গঠন করে, মহিলার প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই প্রেমিককে জেরা করে এই খুনের কারণ ও মহিলার অন্য দেহাংশের খোঁজ চালিয়ে একটি পুকুর থেকে মিলল দেহাংশ। মহিলার নাম খাদিজা বিবি। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে মুড়াগাছা কালিতলা পারুল গ্রামের বাসিন্দা। বিয়ে হয়েছিল মগরাহাটের রাধানগর গ্রামে। পরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। আতিকুর লস্কর নামে এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে তাঁর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কে সে মৃত মহিলার জামাইবাবু।

আতিকুরকে জেরা করে দেহাংশ মিলল রিজেন্ট পার্কের একটি পুকুরে। ওই ঘটনায় নিহত খাদিজা বিবির জামাইবাবু আতিকুর রহমানকে টানা আড়াই ঘণ্টা জেরা করার পর সে জানায় দেহ কোথায় ফেলেছে। এখন প্রশ্ন ওই দেহাংশই খাদিজার কিনা। জেরার মুখে খাদিজাকে খুনের কথা স্বীকারও করে নিয়েছে আতিকুর।

পুলিশ সূত্রে খবর পুকুর থেকে যে দেহাংশ পাওয়া গিয়েছে তা অভিযুক্তই পুলিশকে জানিয়েছে। তদন্ত প্রায় শেষ। দু-একটি সূত্র পাওয়া বাকী। জানা যাচ্ছে অভিযুক্ত পুলিশকে জানিয়েছিল রিজেন্ট পার্কে ফ্রেন্ডস ক্লাবের পেছনের একটি পুকুরে সে মহিলার দেহের অংশ ফেলেছে। এখন জানা বাকী একজন মহিলাকে খুন ও দেহাংশ পাচার অতিকুর একলা করেছিল কিনা, নাকি তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল।

অপরদিকে, রিজেন্ট পার্কের মতো একটি ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় কীভাবে একজন দেহাংশ ফেলে রেখে গেল তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই এলাকার মানুষ এখন আতঙ্কিত। অনেকে বলছেন গত ৬০ বছরে তাঁরা এমন ঘটনা দেখেননি।

এই আতিকুর লস্করই ওই মহিলাকে খুন করেছে বলে দাবি পুলিশের। প্রাথমিক অনুমান সম্পর্কের টানাপোড়েন বা অন্য কোন কারণে খুন হতে পারেন খাদিজা বিবি। এখন সেই তদন্ত করতে আতিকুরকে সারারাত জেরা করছে রিজেন্ট পার্ক থানার তদন্তকারী অফিসাররা।

অভিযুক্ত আতিকুর-এর বাড়ি বাসকডাঙা পঞ্চগ্রামে। মারার কারণ জানতে কাটা মুণ্ডুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, মহিলাকে প্রথমে মাথায় আঘাত করা হয় তারপর শ্বাস রোধ করে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। লালবাজার রিজেন্ট পার্ক থানা ও নেতাজি নগর থানাকে নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল সিট গঠন করা হয়েছে এবং সেই তদন্তকারী দল এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার পর আততায়ীর খোঁজ পেতে সমর্থ হয় পুলিশ। প্রথম দিকে কাটা মুণ্ডু উদ্ধার করার পর ঘটনাস্থলে আসেন লালবাজারের হোমিসাইড শাখা ও স্নিফার ডগ। পুলিশ কুকুরের ৪০০ মিটার দূরত্বের একটি আবাসনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, যদিও সেখানে কোন কিছুই মেলেনি। এরপরই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তদন্তকারী অফিসাররা। পুলিশ সূত্রে খবর, টাওয়ার জাম্পিং করে খুনিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। পুলিশের অনুমান প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহাংশ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এলাকার বিভিন্ন আবর্জনার স্তুপে। সেই কারণেই এলাকার ভ্যাটগুলিতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি জেরা করা হচ্ছে ধৃতকে।