নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতাঃ আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে সিবিআই। বক্তব্যের সপক্ষে ছ’টি কারণ দেখিয়েছে তাঁরা। আজ সেই মামলার শুনানি রয়েছে।
আরজি কর হাসপাতালে যে নৃশংস অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তা সমাজে ভীতি জাগায়। সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করে। সমাজে এই ধরনের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরী হয়, যা জনমানসে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
সঞ্জয়ের ধর্ষণ এবং খুনের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। বিচারক নিজে একে ‘জঘন্য’ এবং ‘নৃশংস’ বলে উল্লেখ করেছেন। সিবিআইয়ের তদন্তেও তা প্রমাণিত। এরপরেও এর মধ্যে ‘বিরলতম ঘটনা’ খুঁজে না-পেলে তা আইনের ভুল ব্যাখ্যা হয়ে দাঁড়ায়। ঘটনার সময়ে সঞ্জয়ের মানসিক কোনও অসুস্থতা ছিল না। খুন বা ধর্ষণের জন্য কেউ তাঁকে উস্কানিও দেয়নি। ফলে সে সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বেচ্ছায় এই কাজ করেছে। সঞ্জয়কে মৃত্যুদণ্ড না-দিয়ে ভুল করেছেন বিচারক। অসহায় চিকিৎসককে হাসপাতালের ভীতর ধর্ষণ করে খুন করেছেন সঞ্জয়। ওই চিকিৎসক টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করেছিলেন। ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে বিপুল আন্দোলন শুরু হয়েছিল। লক্ষাধিক মানুষকে তার ফলে প্রতি দিন ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে।
সঞ্জয় রায় কলকাতা পুলিশের সদস্য ছিলেন। সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে তাঁর কাজ ছিল রোগীর পরিজন এবং পুলিশের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা। অর্থাৎ, চিকিৎসকের সুরক্ষার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনিই তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করেছেন। চিকিৎসককে ধর্ষণের পরও রেহাই দেননি সঞ্জয়। তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন। তাঁকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া যায় না। আরজি কর মামলায় সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩(১) তিনটি ধারাতেই দোষী সাব্যস্ত করেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক। সঞ্জয় রায় শেষ দিনেও আদালতে দাবি করেছেন, তিনি নির্দোষ। জানিয়েছেন, যে কাজ তিনি করেননি, তার জন্য তাঁকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। গলায় রুদ্রাক্ষের মালার কথাও উল্লেখ করেন সঞ্জয়। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তিনি জানান, ঘটনার সময় ওই মালা ছিঁড়ে যায়নি। তবে বিচারক জানিয়ে দেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর অপরাধ প্রমাণিত। শাস্তি ঘোষণার পর সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে যে আবেদন করে, সিবিআই তার বিরোধিতা করেছিল। রাজ্য সরকারের এই মামলা করার এক্তিয়ার আছে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। সোমবার তাঁদের মামলাটি উঠবে উচ্চ আদালতে।