নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) মানেই জ্ঞান ও বিদ্যার আরাধনা, আর সেই সঙ্গে ছোটদের জন্য এক আনন্দময় দিন। একসময় এই পুজোর (Saraswati Puja) জন্য ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করত। কোন রঙের শাড়ি বা পাঞ্জাবি পরবে, কোন কোন বিষয়ের বই দেবী সরস্বতীর কাছে অর্পণ করা হবে—এসব নিয়ে তাঁদের উচ্ছ্বাস থাকত চরমে। অনেকেই ভাবত, যদি সব বই নিবেদন করা হয়, তবে পুজোর দিন আর পড়াশোনার চিন্তা থাকবে না! তবে পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে শুধু আনন্দে মেতে ওঠাই ছিল না তাঁদের উদ্দেশ্য। তাঁরা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাত, স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে পুজোর আনন্দ উপভোগ করত। এই দিনটি শুধু ভক্তি ও আনন্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত না, বরং শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ হয়ে উঠত।
আরও পড়ুন: Excessive Yawning Causes: আপনার বেশি হাই ওঠা স্বাভাবিক নাও হতে পারে! সতর্ক থাকুন!
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে সমাজের ধারা, বদল এসেছে সরস্বতী পুজোর রীতিতেও। আধুনিক যুগের ডিজিটাল প্রভাব আর সোশাল মিডিয়ার দাপটে আজকালকার ছেলেমেয়েরা সেই পুরনো ঐতিহ্য থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। এখন আর মা সরস্বতীর চরণে বই নিবেদন করার প্রবণতা আগের মতো নেই। বরং সরস্বতী পুজো এখন অনেকের কাছেই হয়ে উঠেছে “বাঙালির ভ্যালেন্টাইনস ডে”। শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে,বন্ধু বান্ধবীর সঙ্গে ঘোরা, ছবি তোলা, আর রিলস্ বানানোই এখন প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে অনেকের কাছেই। ফলে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানো কিংবা শিক্ষার প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের গুরুত্ব হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তবে এখনও কিছু জায়গায় পুরনো সংস্কৃতি ধরে রাখার প্রচেষ্টা দেখা যায়। আর তারই একটি সুন্দর উদাহরণ চুঁচুড়ার বালিকা বাণী মন্দির স্কুল, যাঁরা সরস্বতী পুজোর প্রকৃত চেতনা ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁরা চায়, নতুন প্রজন্মও যেন সরস্বতী পুজোর মূল তাৎপর্য বুঝতে পারে এবং শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
নিউজ পোল ইউটিউব লিংক: https://youtu.be/P29UjdiL1dw?si=X9tLLJp6AZAGoS8I
একদিন পড়াশুনা থেকে বিরতি নিয়ে পুজোর আনন্দ উপভোগ করা যেন এক অলিখিত সংস্কৃতি। পাঠ্যবই পড়া বন্ধ থাকলেও পরিবেশ সচেতনতার পাঠ নিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের – এই ভাবনা থেকেই স্কুলে আয়োজন করা হয় পরিবেশ বিষয়ক এক বিশেষ বইমেলা এবং গ্রন্থাগারে ‘পরিবেশ কর্নার স্থাপন’। রবিবার সকালে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তথা পরিবেশকর্মী ধৃতি বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উদ্যোগে গ্রন্থাগারে ‘পরিবেশ কর্ণার’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্য়ায় আপাতত স্কুলটিকে ২৩টি পরিবেশ বিষয়ক বই প্রদান করেছেন, যা ছাত্রীরা পড়তে পারবে। ভবিষ্যতে আরও বই সংযোজন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। এই বইমেলার মূল লক্ষ্য পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে ছাত্রীরা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পরিবেশ সম্পর্কেও গভীরভাবে চিন্তা করতে শেখে। প্রধান শিক্ষিকা ধৃতি বন্দ্যোপাধ্য়ায় জানান, সরস্বতী পুজোর দিনে এই উদ্যোগ নেওয়ার মূল কারণ হল, শুধু বর্তমান ছাত্রীরাই নয়, প্রাক্তনী এবং শহরের অন্যান্য বইপ্রেমীরাও এদিন স্কুলে আসে। তাঁদের মধ্যেও যদি পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তা আরও অর্থবহ হবে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের পৃথিবী এক গভীর অসুখে আক্রান্ত, কারণ আমরা ক্রমাগত পরিবেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছি। এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং আগামী প্রজন্মের কাছে প্রকৃতির গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।” স্কুলের এই উদ্যোগে অভিভাবক ও ছাত্রীরা অত্যন্ত খুশি। পরিবেশ নিয়ে ভাবনা গড়ে তুলতে এমন উদ্যোগ আগামীদিনে আরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গৃহীত হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলেই মনে করেন সকলেই।