নিউজ পোল ব্যুরো: সুন্দরবনের সীমানায় অবস্থিত ঝড়খালি এখন পর্যটকদের কাছে এক নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। মূল সুন্দরবনে প্রবেশ না করেও সুন্দরবনের অনন্য পরিবেশ উপভোগ করার সুযোগ মিলছে এখানেই, যা পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় ক্রমশ জায়গা করে নিচ্ছে।

সুন্দরবনের বিশাল বিস্তৃতি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ অনেকেরই হয়ে ওঠে না, তবে ঝড়খালি সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে। কুলতলি ও ঝড়খালির মাঝে বয়ে চলা মাতলা নদী যেন দুই জগতের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নদী পেরোলেই শুরু হয় সুন্দরবন, যদিও সেটি মূল জঙ্গলের অংশ নয়। এই কারণেই ঝড়খালিকে বলা হয়েছে ‘মিনি সুন্দরবন’। এখানকার পরিবেশ, নদী ও জঙ্গল পর্যটকদের সুন্দরবনের আবহ এনে দিয়েছে। মাতলা নদীর পাশাপাশি এখানে রয়েছে হেরোভাঙা নদী, যার তীর ঘেঁষে জন্মানো গাছগাছালি একটি ঘন জঙ্গলের অনুভূতি এনে দেয়। এই প্রাকৃতিক পরিবেশই পর্যটকদের মনে সুন্দরবনের ছোঁয়া জাগিয়ে তুলছে। ঝড়খালির অন্যতম আকর্ষণ টাইগার রেসকিউ সেন্টার। সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা বাঘদের এনে এখানে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়, তারপর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পর্যটকরা মাঝে মধ্যেই এখান থেকে বাঘের গর্জন শুনতে পান যা তাঁদের রোমাঞ্চ আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া ঝড়খালির কাছেই রয়েছে সুধন্যখালি ওয়াচ টাওয়ার। এখন থেকে চারপাশের বিস্তীর্ন জঙ্গল ও বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ মেলে। পর্যটকরা চাইলে দোবাঁকির জঙ্গলে হেঁটে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

ঝড়খালির জনপ্রিয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারন হল কলকাতা থেকে গাড়িতে সরাসরি এখানে পৌঁছানো যায়। মাত্র ১০৫ কিলোমিটারের পথ পেরিয়ে সহজেই ঝড়খালি পৌঁছানো যায়। দীর্ঘ নৌযাত্রার ঝামেলা ছাড়াই সুন্দরবনের স্বাদ নিতে চাইলে ঝড়খালি হতে পারে এক আদর্শ গন্তব্য। ঝড়খালি ভ্রমনের পাশাপাশি পর্যটকরা এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি ও হস্তশিল্পের স্বাদও নিতে পারেন। সেখানকার গ্রামের কারিগরদের তৈরী উলু ঘাসের ঝুড়ি, বাস্কেট, হাতপাখা, টুপি এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ এখানে পাওয়া যায়। এই জিনিসগুলোর জনপ্রিয়তা রয়েছে পর্যটকদের মধ্যে।

ঝড়খালি থেকে সহজেই বনিক্যাম্প, নেতাধোপানি ওয়াচ টাওয়ার এবং সূর্যমণি দ্বীপের মতো তুলনামূলক কম ভিড়যুক্ত পর্যটনস্থলগুলো ঘুরে দেখা যায়। যাঁরা আরও গভীর ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে জলগোপালপুরের প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালা। এটি মূলতঃ সুন্দরবন ও সংলগ্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া প্রত্নসামগ্রী নিয়ে তৈরী হয়েছে, যা সুন্দরবনের অতীত ও জীবনযাত্রার একটি চিত্র তুলে ধরে। এই শীতের মরসুমে ঝড়খালির জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রকৃতির সান্নিধ্য, বন্যপ্রাণীর দর্শন, গ্রামবাংলার জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা এবং সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে ঝড়খালি এখন পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের এক আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠেছে। যাঁরা নিরিবিলিতে সুন্দরবনের স্বাদ নিতে চান, তাঁদের জন্য ঝড়খালি নিঃসন্দেহে একটি আদর্শ গন্তব্য।