জানেন হরিদাস পাল আসলে কে? রইলো বিস্তারিত পরিচিতি

অফবিট

নিউজ পোল ব্যুরো : কাউকে অবজ্ঞা করে হোক কিংবা মজার ছলে আমরা প্রায়ই অনেককেই ‘হরিদাস পাল’ বলে থাকি। বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বাগধারা এবং প্রবাদপ্রবচন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেকটা ব্যবহৃত হয়। এই বাগধারাগুলির মধ্যে “কে তুমি হরিদাস পাল!” একটি অত্যন্ত পরিচিত এবং ব্যবহারিক উক্তি। তবে, এটি প্রায়শই কিছু মানুষের উদ্দেশে ব্যবহার করা হয় যাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কিংবা যারা কোন কাজের জন্য অপ্রত্যাশিত বা অস্বাভাবিক কিছু করেছেন। এই বাগধারাটি সাধারণত তাচ্ছিল্য বা বিরক্তি প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুনঃ বল পায়ে আরও একবছর মাঠ মাতাবেন CR7

তবে, আসল অর্থে “হরিদাস পাল” কে ছিলেন, তা অনেকেরই অজানা। “হরিদাস পাল” ছিলেন বাংলদেশের হরিপুরের বাসিন্দা। প্রভাবশালী বড়োলোকের ছেলে ছিলেন তিনি। পূর্বপুরুষদের বিশাল সম্পত্তি নিয়ে হরিপুর থেকে কলকাতায় এসে থাকতে শুরু করেছিলেন হরিদাস পাল। কলকাতায় এসে হরিদাস পাল প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছিলেন। এরপর থেকে দুহাতে টাকা ওড়াতেন তিনি, আর এভাবেই কিছুদিনের মধ্যে তার ব্যবসার অবনতি ঘটতে থাকে। ধীরে ধীরে তিনি নিঃস্ব হয়ে যান। এরপর থেকে কেউ আর পাত্তা দিতো না। রোগে ভুগে চেহারাও বদলে গিয়েছিলো তার। একদিন তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে তারই এক প্রাক্তন কর্মচারীর কাছে আর্থিক সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কর্মচারী প্রথমে হরিদাস পালকে চিনতে পারেননি। এমনকি হরিদাস পাল তার নিজের পরিচয় দেওয়ার পরেও পাত্তা দেননি ওই কর্মচারী। এরপর হরিদাস বলেন, একটা সময় তুমি আমার কথা শুনতে, কিন্তু এখন আর আমাকে পাত্তা দিচ্ছ না। উত্তরে ওই কর্মচারী বলেন, ‘তুমি কোন হরিদাস পাল যে তোমার কথা এখনও শুনতে হবে।’ সেই থেকেই এই বাগ্ধারাটি প্রচলিত।

নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিংকঃ https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/

এই বাগধারাটি মূলত তারাই ব্যবহার করেন যারা ভাবেন, কেউ যেন নিজেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বা বিশেষ মনে না করেন। এটি এক ধরনের নিন্দা বা বিরোধিতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রশ্ন করা হয় ব্যক্তির সত্যতা বা তার ক্ষমতা নিয়ে। প্রবাদটি সমাজে এমন এক অবস্থায় ব্যবহার করা হয় যেখানে একজন ব্যক্তি কোন বিশেষ পরিচয় বা ভূমিকা দাবি করছেন, কিন্তু তার ক্ষমতা বা সেই ভূমিকা সম্পর্কে মানুষের কাছে কোন পরিষ্কার ধারণা নেই। এখানে এটি একটি প্রমাণ দেওয়ার বা চ্যালেঞ্জ করার মতো কাজ করে—”আপনি কী সত্যিই সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে আপনি বলছেন?”

আরও পড়ুনঃ Newtown: নতুন রাস্তার মোড়ের নামকরণে তীব্র প্রতিবাদ

এই বাগধারাটি বাংলাদেশের এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত। একটি সাধারণ উদাহরণ হতে পারে, যদি কেউ একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে বা বড়ো বড়ো কথা বলে, কিন্তু তার কাজকর্ম কোনো মাপকাঠিতে মেলে না, তাহলে তাকে প্রশ্ন করা হতে পারে, ‘কে তুমি হরিদাস পাল?’ অর্থাৎ, তুমি কি সেই ব্যক্তি যার পক্ষে এত বড় কিছু বলা সম্ভব? এটি ছাড়াও, “হরিদাস পাল” শব্দের ব্যবহার আরও এক ধরনের আক্ষরিক অর্থেও হয়ে থাকে। এটি কিছু সময়ে মানুষের আচরণকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ব্যবহৃত হয়—যেমন ধরুন, কেউ কিছু করার জন্য অন্যদের নির্দেশ দিচ্ছে অথচ তার নিজের কোনো অবস্থা বা পরিস্থিতি স্পষ্ট নয়। তবে, এর মাধ্যমে মানুষ যখন কাউকে অপমান বা তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে বলেন, তখন এটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময়, এটি কোন কাজের সঠিক মূল্যায়ন না করেই কাউকে ছোট করার একটা প্রচেষ্টা হতে পারে। তাই, এই ধরনের বাগধারাগুলি ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা উচিত যাতে কোনও অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি না হয় এবং সম্মান বজায় থাকে। অতএব, “কে তুমি হরিদাস পাল!” বাগধারাটি একটি সমাজে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রশ্ন করার একটি উপায় হতে পারে, যেখানে কেউ নিজের স্থান বা শক্তি নিয়ে অহঙ্কারী হয়ে ওঠে। তবে, এটি কোথায় এবং কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নির্ভর করে প্রসঙ্গ এবং পরিস্থিতির ওপর।