নিউজপোল ব্যুরোঃ অনাথ গাছেদের আশ্রয় দাতা তিনি, খুঁজে খুঁজে তাদের বের করে নিরাপদে লালনপালন করেন যিনি। সকলকে হারিয়ে পরিবারের অভাব অনুভব করে প্রতিটি শিশু, সেই অভাবের যন্ত্রনায় প্রলেপ দিতে পারে একমাত্র যত্নই। এবার ভাবুন তো? এই অভাব প্রান থাকলেই অনুভব হয় প্রতিটি প্রাণীর, তাহলে গাছের কেন নয়? কেন আনাচে কানাচে অভাবকে সঙ্গ করেই ঝুঁকিপূর্ণ জীবন কাটাতে হয় গাছেদের? চাইলেই তো অভিভাবক দেওয়া যেতে পারে তাদেরকেও। সেই ভাবনা থেকেই পৃথিবীতে ‘অনাথ’ গাছেদের সংখ্যা কমাতে অনবরত খেটে চলেছেন সোমনাথ।
বোলপুরের চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই পরিচিত সোমনাথ ঘোষ নামের যুবক। তাঁর এবং আরো কয়েকজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত বছর অর্থাৎ ২০২১-এ বোলপুরে তৈরি হয়েছে ‘বৃক্ষ ফাউন্ডেশন’ (Brikkho Foundation) নামে একটি গাছেদের অনাথ আশ্রম তথা আশ্রয় ।
হোমো স্যাপিয়েন্স অর্থাৎ মনুষ্য জাতির আবির্ভাবের অনেক আগে থেকে—লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে বসবাস গাছেদের। বিশ্ব বাঁচাতে সবুজায়ন অন্যতম পথ। কেন্দ্রের অনুমোদনে এই সংস্থা সরাসরি এবং ওয়েব সাইটের মাধ্যমে গাছের চারা দত্তক (Tree Adoption) দিচ্ছেন৷ এমনকি দত্তক নেওয়া চারা রোপণের জন্য জমি দেওয়া এবং তার পরিচর্যা করার দায়িত্বও নিচ্ছে বৃক্ষ ফাউন্ডেশন ৷
শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা সোমনাথ ঘোষ। কলকাতার হাই-টেক অ্যানিমেশন ইনস্টিটিউট থেকে ফিল্ম এডিটিং শেখার পর মাল্টি-মিডিয়া প্রোডাকশন হাউস, ‘ছায়া-ছবি ইন্ডিয়া’ শুরু করেন। কলকাতা ছেড়ে আবার ফেরেন শান্তিনিকেতনে, সেখানে গিয়ে তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম, বিজ্ঞাপন, পোস্টার ডিজাইন ইত্যাদি তৈরি করতে থাকেন তিনি। অল্পদিনেই নিজের পেশাকে আয়ত্ত করে এলাকায় বেশ পরিচিতি লাভ করতে থাকেন তিনি। সে সময়ে করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠান, আর সে সময়েই মোড় ঘোরে জীবনের। সে সময় থেকেই সমাজের কল্যাণমূলক কাজের দিকে আরও বেশি করে মন টানতে থাকে সোমনাথের। করোনাকালে অভুক্ত অসহায় প্রাণীদের জন্য টানা ১৫০দিন খাবার জোগান দেন তিনি। আমফানের সময়ও দূরবর্তী গ্রামে পৌঁছে পাশে দাঁড়ান আর্তদের।
সেই সময়ে এক গাছ নার্সারি মালিক তাকে ৪০০ টি গাছের চারা দান করতে চান। এই সময়ে নানান অসুবিধের জন্য একসঙ্গে এতগুলো গাছের দেখভাল করা সম্ভব হয়নি তার জন্য। অন্যদিকে আবার একসঙ্গে এত গুলি গাছ রোপনের মত জমিও ছিল না সোমনাথের।
পাশে দাঁড়ান। এর মধ্যেই তাঁর এক শিক্ষক তাঁকে জানান যে একজন গাছ-নার্সারি মালিক ৪০০টি চারা দান করতে চাইছেন। সোমনাথ সেই চারাগুলোর দায়িত্ব নিতে চান কিন্তু এত চারা রোপণের জন্য জমি তাঁর কাছে ছিল না।
এর পরেই নিজের মাল্টি-মিডিয়া হাউসের জন্য তাঁর কেনা সমস্ত সরঞ্জাম বিক্রি করে দেন সোমনাথ এবং ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ‘বৃক্ষ ফাউন্ডেশন’। যেখান থেকে আশ্রয় খুঁজে দেওয়া হয় হাজারো শিশু অনাথ গাছকে। তাঁর তৈরি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দূরদূরান্তের মানুষজনও গাছ দত্তক নিতে পারবেন। গাছ থেকে কেমন ভাবে লালন পালন করবেন সমস্ত তথ্য জমা পড়বে এই ওয়েবসাইটে।
ঠিক যেমন একটি আশ্রম থেকে ছোট শিশু নিয়ে গেলে তাকে লালন পালন করা বাবা-মার দায়িত্ব তেমনি এক্ষেত্রেও একই। নার্সারি থেকে গাছ নিয়ে গেলে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে বাবা-মাকে। স্নেহের সঙ্গে লালন পালন করতে হবে তাকে এবং সেই সমস্ত আপডেট জমা ফেলতে হবে ওয়েবসাইটে। এভাবেই বাবা-মা খুঁজে পাবে তা ঠিক অসহায় অনাথ গাছেরা।
যে যান দত্তক নেওয়া হচ্ছে, সেই গাছ ছোটো থেকে বড়ো হওয়ার সমস্ত তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করে সংস্থাটি।
পুরোনো বাড়ির দেওয়ালে আগাছার মতো বট, অশ্বত্থ গাছের চারা দেখলে সেগুলিকে সংগ্রহ করে সংস্থার তরফে যত্ন করে লালন পালন করা হয়। সম্প্রতি তার এই কাজ এলাকা ছাড়িয়ে সুনাম ছড়াচ্ছে গোটা রাজ্যে। তাঁর কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ নিচ্ছেন গাছ দত্তক নিতে।