History: ভারতে মিলল লৌহ যুগের নিদর্শন

ইতিহাস দেশ শিক্ষা

নিউজ পোল ব্যুরো : ইতিহাসের (History) পাতা উল্টালে দেখা যায়, লৌহযুগের সূচনার সময়কাল নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক রয়েছে। এতদিন পর্যন্ত ধারণা করা হত, আনুমানিক ১৫০০-১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে লৌহযুগের প্রচলন শুরু হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক এক প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার সেই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

ইতিহাসের (History) পাতা উল্টে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এবং একদল গবেষকের সাম্প্রতিক অনুসন্ধান অনুযায়ী, ভারতে লৌহযুগের অস্তিত্ব তার পূর্বে শুরু হয়েছিল। উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্য প্রদেশ, এবং ওডিশার বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দাবি করছেন যে, ভারতে ১৮০০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেও লৌহযুগের অস্তিত্ব ছিল। যদি এই গবেষণা স্বীকৃতি পায়, তাহলে ভারতবর্ষের লৌহযুগের সময়কাল প্রায় ৫০০ বছর পেছনে চলে যাবে এবং ইতিহাসের সময়লিখন বদলে যেতে পারে।

Summer Tips: সস্তায় পুষ্টি? দিদিমার পুরনো কৌশলেই মিলবে সমাধান

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারী তামিলনাড়ু রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ ‘অ্যান্টিকুইটি অফ আয়রন’ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। গবেষণাপত্রটি লিখেছেন পন্ডিচেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে রাজন। ৭৩ পৃষ্ঠার ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ বছর আগে তামিলনাড়ুতে লোহার প্রচলন ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদরা তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় খননকার্য চালিয়ে পাওয়া নিদর্শনের সময়কাল যাচাই করার পর তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।

প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ কী বলছে?

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের সোনভদ্র ও মধ্য প্রদেশের বিদিশা জেলায় খননের সময় গবেষকরা এমন কিছু লৌহ নির্মিত অস্ত্র, সরঞ্জাম এবং বাসনপত্র আবিষ্কার করেছেন যা ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। এই নিদর্শনগুলোতে ধাতব গলানোর চিহ্ন স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে, যা নির্দেশ করে যে, এখানকার মানুষ এতদিন ধারণার চেয়েও অনেক আগেই লৌহ ব্যবহার করত।
এছাড়া, বিহারের চিরান এবং ওড়িশা ধর্মপূরী অঞ্চলে খননের সময় পাওয়া নিদর্শনগুলোর রেডিওকার্বন পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ১৮০০-২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এখানকার মানুষেরা লোহার ব্যবহার করতো। গবেষকরা মনে করছেন, এটি লৌহযুগের প্রকৃত সময়কাল পরিবর্তন করার মতো একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার হতে পারে।

https://www.facebook.com/share/p/14ntxvWaWn/

লৌহযুগের সংজ্ঞা এবং নতুন বিতর্ক

ইতিহাস (History) অনুসারে, লৌহযুগ হল সেই সময় যখন মানুষ লোহার ব্যবহার শুরু করে এবং ধাতব অস্ত্র ও সরঞ্জাম নির্মাণে দক্ষ হয়ে ওঠে। পশ্চিমা গবেষকদের মতে, ইউরোপে লৌহযুগ শুরু হয়েছিল আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে তা ১৫০০-১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে প্রসার লাভ করে। কিন্তু এই নতুন গবেষণা যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন লৌহযুগের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এই আবিষ্কার ভারতের প্রাচীন সভ্যতা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে। এতদিন পর্যন্ত অনুমান করা হত, ভারতীয় উপমহাদেশে কৃষ্ণাঙ্গ সভ্যতার মানুষরা পশ্চিম এশিয়া বা মধ্য এশিয়া থেকে ধাতুবিদ্যার জ্ঞান অর্জন করেছিল। কিন্তু নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ভারতবর্ষের মানুষ নিজেরাই স্বতন্ত্রভাবে লোহার ব্যবহার শুরু করেছিল।

ইতিহাসের বই কি বদলে যাবে?

এই আবিষ্কারের ফলে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে নতুন গবেষণার দরজা খুলে যেতে পারে। যদি ভারতের লৌহযুগের সময়কাল ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পেছনে যায়, তাহলে ইতিহাসের পাঠ্যবইগুলোকেও নতুনভাবে লেখা লাগবে। পাশাপাশি, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভারতবর্ষের ধাতুবিদ্যার অগ্রগতিকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করা হবে। গবেষকরা আরও বিস্তারিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং নতুন প্রাপ্ত নমুনাগুলোর পরীক্ষা চলছে। যদি প্রমাণিত হয় যে ভারতই বিশ্বের প্রথম অঞ্চলের মধ্যে একটি যেখানে লৌহযুগের সূচনা হয়েছিল, তবে এটি ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ইতিহাসের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। ভারতের এই সাম্প্রতিক আবিষ্কার যদি স্বীকৃতি পায়, তবে তা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা বদলে দেবে। এটি ভারতকে বিশ্বের প্রাচীনতম লৌহ প্রযুক্তির কেন্দ্র হিসেবে প্রমাণ করতে পারে। এখন গবেষকদের পরবর্তী কাজ হবে, এই তথ্যের আরও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা এবং ইতিহাসের সময়রেখায় নতুন সংযোজন করা।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পুরাতত্ত্ববিদ দিলীপকুমার চক্রবর্তীর মতে, তামিলনাড়ুর প্রত্নত্তবিদরা যে গবেষণা করেছেন তার গুরুত্ব অপরিসীম। আমার ব্যক্তিগত মত সেই সময়ের কিছু হরপ্পান সাইটেও লোহার নিদর্শন থাকে উচিত। গাঙ্গেয় উপত্যকার মালাহার থেকে পাওয়া নিদর্শনগুলি প্রমান করে যে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে সূচনাকালে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় লোহা আদানপ্রদানের চল ছিল। এ নিয়ে আরও গবেষণা হাওয়া উচিত। কিন্তু এই আবিষ্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ববিদদের অনেক অভিনন্দন জানাই।’