রাত পোহালেই গণনা, ভাগ্য নির্ধারণ হবে মহারাষ্ট্র ঝাড়খণ্ড সহ রাজ্যের ছয় বিধায়কের

কলকাতা জেলা রাজনীতি রাজ্য শহর

মৃণালকান্তি সরকার, কলকাতা: রাত পোহালেই গণনা। কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে গণনা কেন্দ্রের ২০০ মিটার। থাকছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা। গণনা শুরু হবে সকাল আটটা থেকে।

মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি জায়গায় উপ- নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে আগামীকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে। নির্বাচন কমিশন কোনরকম খামতি রাখতে চাইছে না গণনাকে কেন্দ্র করে। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মতোই একই রকম নিয়ম বলবৎ থাকছে শনিবারের গণনায়। গণনা কেন্দ্রের বাইরে ২০০ মিটার পর্যন্ত জারি থাকবে নতুন ধারা অনুযায়ী ১৬৩ ধারা। প্রথম স্তরে থাকছে রাজ্য পুলিশ। রাজ্যের লাঠিধারী এবং এএসআই পদাধিকারী পুলিশেরা থাকবেন। এরপর দ্বিতীয় স্তরে থাকবেন রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর একেবারে শেষ স্তরে থাকবেন কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রার্থীর এজেন্টরা গণনা কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করবেন কেবলমাত্র সাদা কাগজ এবং পেন নিয়ে। দ্বিতীয় স্তর যে জায়গাটি চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানেই সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সংবাদ পরিবেশন করার জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। গণনা কেন্দ্রের ভেতর থাকছে সিসিটিভি, গণনা কেন্দ্রে কোনও রকম ওয়েবকাস্টিং হবে না। প্রথমে গণনা হবে পোস্টাল ব্যালট তারপরেই শুরু হবে ইভিএমের ভোট গণনার কাজ। পোস্টাল ব্যালেট গোনা হবে মূল ঘরের পাশে একটি ঘরে। স্ট্রংরুম থেকে এক এক করে আনা হবে ইভিএম এবং কমিশনের নিয়ম ও আইন অনুযায়ী গণনা করা হবে। সবকটি ইভিএম গণনা হয়ে গেলে সেটি আসবে কাউন্টিং অবজারভারের টেবিলে। কাউন্টিং অবজারভার এবং রিটার্নিং অফিসার সব খতিয়ে দেখে তারপর ফলাফল ঘোষণা করবেন।
এই মুহূর্তে স্ট্রং রুম পাহারা দেওয়ার জন্য এক প্ল্যাটুন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা আছে প্রত্যেকটি স্ট্রংরুমে। এক প্ল্যাটুন অর্থাৎ ২৪ জন। এই ২৪ জনকে তিনটে শিফটে ৮জন করে ডিউটি করতে হচ্ছে। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে নির্বাচন কমিশন যে নতুন নিয়ম তৈরি করেছে তার ফলে যে কোন রাজনৈতিক দল গণনা কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যেই তাঁবু খাটিয়ে ২৪ ঘন্টা নজরদারি চালাতে পারবে। স্ট্রংরুমে যদি কেউ আসেন তার জন্য সেখানে সিসিটিভি রাখা আছে। কোন রাজনৈতিক দল যাতে কোনো রকম অভিযোগ তুলতে না পারে সেই কারণেই কমিশনের এই সিদ্ধান্ত। গণনা কেন্দ্রে একমাত্র কাউন্টিং অবজারভার এবং রিটার্নিং অফিসার ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না বা মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সকাল ৭ টার মধ্যে গণনা কেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য। স্ট্রং রুমের সিল ও তালা খোলা হবে সব রাজনৈতিক দলের সামনে এবং তা ভিডিওগ্রাফিও করা হবে।

শনিবার রাজ্যের ছয় উপ-নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে। প্রথমে ইটিপিবিএসের ( ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম ) মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট গোনার কাজ শুরু হবে তারপর একে একে ইভিএমের গণনা শুরু হবে। আর সেই গণনা নিয়েই নির্বাচন কমিশন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যস্ত রয়েছে। তার কারণ, যেখানে গণনা করা হবে সেই ঘরটিতে কেবলমাত্র প্রবেশের জন্য একটিমাত্রই দরজা থাকতে হবে। যদিও এরই মধ্যেই সেই ঘরগুলো নির্বাচন কমিশন চিহ্নিত করে ফেলেছে। তৈরি হয়ে গিয়েছে ভেতরের ঘেরাটোপও। আর এই মুহূর্তে যেখানে গণনা করা হবে তার পাশেই রয়েছে স্ট্রংরুম, যে স্ট্রংরুমে ইভিএমের মধ্যে ভাগ্য বন্দি রয়েছে সব রাজনৈতিক দলগুলোর। উপ-নির্বাচন বলে নির্বাচন কমিশন কোনরকম গাফিলতি করতে চাইছে না। তাই প্রথম থেকেই কমিশন একেবারেই লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মতোই কড়া হাতেই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। যাতে করে কোন রাজনৈতিক দলই কোনও মন্তব্য করতে না পারে। নির্বাচন এখনও পর্যন্ত যেভাবে এই ছয় গণনা কেন্দ্রের সবকিছু সাজিয়েছে তা একেবারেই এইরকম।

সিতাই উপনির্বাচন বিধানসভা কেন্দ্র:
গণনা কেন্দ্র: দিনহাটা কলেজ।
পোলিং স্টেশন: ৩০০।
হল নম্বর ১: ২৫ টি গণনা টেবিল।
গণনা রাউন্ড : ১২ রাউন্ড গণনা
হল নম্বর ২ : ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম: ৩ টে কাউন্টিং টেবিল।
স্ট্রং রুম: ২ টি।

মাদারিহাট উপনির্বাচন বিধানসভা কেন্দ্র:
গণনা কেন্দ্র: আলিপুরদুয়ার ইন্ডোর স্টেডিয়াম।
পোলিং স্টেশন: ২২৬ ।
হল নম্বর ১: ২৮ টি গণনা টেবিল।
গণনা রাউন্ড : ৯ রাউন্ড গণনা
হল নম্বর ২ : ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম: ১০ টি কাউন্টিং টেবিল।
স্ট্রং রুম: ২ টি।

নৈহাটি উপনির্বাচন বিধান সভা কেন্দ্র:
গণনা কেন্দ্র: বঙ্কিমঞ্জলি স্টেডিয়াম।
পোলিং স্টেশন: ২১০ ।
হল নম্বর ১: ২১ টি গণনা টেবিল।
গণনা রাউন্ড : ১০ রাউন্ড গণনা
হল নম্বর ১ : ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম: ৬ টি কাউন্টিং টেবিল।
স্ট্রং রুম: ১ টি।

হাড়োয়া উপনির্বাচন বিধানসভা কেন্দ্র:
গণনা কেন্দ্র: হাড়োয়া পি জি হাই স্কুল।
পোলিং স্টেশন: ২৭৯ ।
হল নম্বর ১: ২০ টি গণনা টেবিল।
গণনা রাউন্ড : ১৪ রাউন্ড গণনা
হল নম্বর ১ : ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম: ২ টি কাউন্টিং টেবিল।
স্ট্রং রুম: ৩ টি।

মেদিনীপুর উপনির্বাচন বিধান সভা কেন্দ্র:
গণনা কেন্দ্র: মেদিনীপুর কলেজ।
পোলিং স্টেশন: ৩০৪।
হল নম্বর ২ : ১৮ টি গণনা টেবিল।
গণনা রাউন্ড : ১৭ টি রাউন্ড গণনা
হল নম্বর ১ : ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম: ৩ টি কাউন্টিং টেবিল।
স্ট্রং রুম: ৩ টি।

তালডাঙরা উপনির্বাচন বিধানসভা কেন্দ্র:
গণনা কেন্দ্র: সিমলাপাল মদনমোহন হাই স্কুল ।
পোলিং স্টেশন: ২৬৪ টি।
হল নম্বর ৩ : ২৪ টি গণনা টেবিল।
গণনা রাউন্ড : ১১ টি রাউন্ড গণনা
হল নম্বর ২ : ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম: ৭ টি কাউন্টিং টেবিল।
স্ট্রং রুম: ২ টি।

যতদিন যাচ্ছে কমিশন ততই যেন ধীরে ধীরে সাবালক হয়ে উঠছে, আর তাই এবারেও রাজ্যের ছয় উপ-নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে এই রাজ্যের ফলাফল ঘোষণা করতে এখন যে পদক্ষেপ করছে তা রীতিমতো নজীরবিহীন বলেই সকলে মনে করছেন। এখন দেখার নির্বাচন কমিশন কতটা শান্তিপূর্ণভাবে সবকাজ করতে সক্ষম হয়।