নিউজ পোল ব্যুরো: শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) বাড়ির সামনে বসে বিক্ষোভ শুরু করলেন চাকরিহারা প্রার্থীরা। সুপ্রিম কোর্টের (suprime court) নির্দেশ মেনে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছে পর্ষদ ও রাজ্য সরকার (state government)। সেক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আর্জি নিয়ে তাঁর বাড়ির সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে প্রশ্ন উঠলো চাকরিহারাদের উপর। কেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও তাঁরা স্কুলে (school) যোগ দিতে পারেননি সেই নিয়েই বারংবার প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকরা। সুপ্রিম কোর্টের স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেও তাঁরা স্কুলে ফেরত যেতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর তরফে কোনও আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করবেন বলে জানানো হয়েছে। আদালত বলেছিল,”শিক্ষকরা শিক্ষকদের (teacher) মতো আচরণ করুন”। তার পরেও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) বাড়ির সামনে অভাবনীয় আচরণ বিক্ষোভকারীদের একাংশের। বৃহস্পতিবার, শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে বসেই বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীদের কয়েকজন। তাঁদের দাবি, ”শিক্ষা মন্ত্রীকেই সেখানে বেরিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে নাহলে তারা শুনবেন না, থামবেনা তাদের বিক্ষোপও”। চাকরিহারা এক শিক্ষক জানিয়েছেন, ‘১৭,২০৬ জনের স্কুলে ফেরত যাওয়ার কথা। কিন্তু তার মধ্যে ১৫ হাজার শিক্ষক স্কুলে যেতে পারছেন। আমরা বার বার করে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি, কিন্তু সকলেই আমাদের কথা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা দপ্তর জানে আমরা স্কুলে যাচ্ছি এবং বেতন পাচ্ছি। কিন্তু আমরা স্কুলে যোগ দিতে পারিনি।’
২০১৬ সালের পুরো SSC-র প্যানেল বাতিল করার রায় জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। এবং তার পরবর্তীতে শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখতেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে সুপ্রিম কোর্টে ক্লারিফিকেশন চেয়ে আবেদন করা হয়। তবে শুধুমাত্র ‘টেন্টেড (tented) প্রার্থীরা বাদ দিয়ে প্রত্যেকের ডিসেম্বর (december) মাস পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া ও বেতন চালু থাকার অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু স্কুলে যোগদান করার জন্য জেলা ‘ডিআই’ অফিস ও প্রধান শিক্ষকের কাছে চাকরিহারা শিক্ষকদের যে পুরো তালিকা পাঠানো হয় তাতে এইসমস্ত শিক্ষকদের নাম নেই বলেই দাবি। তাঁদের বক্তব্য, “সুপ্রিম কোর্ট স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেও কেন তাঁরা স্কুলে ফেরত যেতে পারেননি, কেন তালিকায় তাদের নাম আসেনি?”
সেই কারণেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার আর্জি নিয়েই তাঁদের অবস্থান বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: India VS Pakistan: জল নয়, এবার জবাব! পাকিস্তানকে রুখতে ভারতের বড় পদক্ষেপ
এবিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে যেটা হচ্ছে সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্ররোচনা করা হচ্ছে। এইবিক্ষোপ কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না। শিক্ষকদের চাকরি চলে যাওয়ার জন্য ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) কোনোভাবেই দায়ী নন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেকে মান্য করেই এটা হয়েছে। এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay) এই বিষয়ে সহানুভূতিশীল। তিনি আইনিভাবে এই বিষয়টার সমাধান করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন কিছু পদক্ষেপও করেছেন। এই পরিস্থিতিতে এভাবে শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ অনভিপ্রেত এবং কোনও অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়”।
ইউনাইটেড টিচিং অ্যান্ড নন টিচিং ফোরামের (united teaching and non teaching forum)সদস্যরা জানিয়েছেন, যে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ( Bratya Basu) কাছে পাঠানো ফোন এবং টেক্সট মেসেজের কোনও উত্তর মেলেনি। ওই ফোরামের মুখপাত্র কমলেশ কাপাট আরো জানান, তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন যে কেন ১৭,২০৬ জন শিক্ষকের তালিকা থেকে ১,৮০৪ জন শিক্ষকের নাম বাদ দেওয়া হল, যেখানে মন্ত্রীসচিব তাদের কে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে শিক্ষামন্ত্রী তাদের সাথে আলোচনায় বসবেন এই বিষয়ে। তারপর তারা বিক্ষোপ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কমলেশ আরো প্রশ্ন করেন যেই ১,৮০৪ জন শিক্ষককে “কলঙ্কিত” শিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের বেতন বন্ধ করতে হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না কেন আমাদের কলঙ্কিতদের তালিকায় রাখা হয়েছে। সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে তালিকা জমা দেওয়ার সময় বলেছে যে কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওএমআর বিরোধের অভিযোগ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সেই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাহলে, কিসের ভিত্তিতে আমাদের কলঙ্কিত হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে?” উনি আরো বলেন “তাই জন্য শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে কলঙ্কিত মানুষরা বসে আছেন বছরের শেষ অবধি কাজ করার ও তাদের বেতনের দাবি নিয়ে।

ব্রাত্য বসুর বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভকারীদের ভিড় হওয়ার সাথে সাথে, কালিন্দী পুলিশ ফাঁড়ি থেকে রেলিং আনা হয়, মন্ত্রীর বাড়ির চারপাশে এবং রাস্তায় মহিলা কনস্টেবল সহ পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন আরো জোরদার করা হয়। লেকটাউন থানার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকার বিষয়ে অফিসারদের অবহিত করা হয়েছিল। সংযম দেখানোর জন্যই এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যেন বিক্ষোপে কোনও অনাচার না ঘটে এবং কোনও বহিরাগত ঝামেলা তৈরি করতে যেন না পারে।”
তাদের দাবি শিক্ষামন্ত্রী দেখা না করলে বৃহত্তর আন্দোলন করবেন তারা হুঁশিয়ারি চাকরিহারাদের। যদিও, এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি এখনও পর্যন্ত।
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব লিঙ্ক:- https://youtube.com/@newspolebangla?si=mYrQvXTBQ1lG3NFT