নিউজ পোল ব্যুরো : ভারতের ইতিহাসে এমন অনেক রাজপরিবার রয়েছে, যাঁদের ঐশ্বর্য, ক্ষমতা এবং কাহিনি আজও সকলের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। তেমনই এক নাম নবাব বেগম সুলতান জাহান, যিনি ছিলেন বহত রাজ্যের শেষ মহিলা নবাব। বলিউড তারকা সইফ আলি খানের পূর্বপুরুষদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এই নবাব বেগম। শোনা যায়, তিনি প্রায় ১৫ হাজার কোটির সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন এবং ব্রিটিশ ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন।
বেগম সুলতান জাহান ছিলেন বহত রাজ্যের চতুর্থ ও শেষ মহিলা শাসক। ১৯০১ সালে তিনি সিংহাসনে বসেন এবং ১৯২৬ সাল পর্যন্ত এই রাজ্য শাসন করেন। একদিকে তিনি ছিলেন কঠোর প্রশাসক, অন্যদিকে ছিলেন প্রজাবৎসল শাসক। তাঁর শাসনকালে রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নারী উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। নবাব বেগম সুলতান জাহান ছিলেন এক আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির শাসক। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, সমাজের উন্নতির জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। বিশেষ করে, মুসলিম নারীদের শিক্ষিত করার পক্ষে তিনি বিশেষ উদ্যোগী হন। তিনি অলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
যদিও তিনি ১৫ হাজার কোটির সম্পত্তির মালিক ছিলেন, তবুও নবাব বেগম সুলতান জাহানের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত সরল। তিনি বিলাসবহুল পোশাক বা গহনায় খুব বেশি আসক্ত ছিলেন না। সাধারণত তিনি সাদা রঙের পোশাক পরতেন এবং সাধারণ জীবনযাত্রা বজায় রাখতেন। সইফ আলি খান একজন নবাব বংশের উত্তরাধিকারী। তার পিতৃপক্ষের বংশধারা বহত রাজ্যের নবাবদের সঙ্গে যুক্ত। নবাব বেগম সুলতান জাহান ছিলেন তার বৃদ্ধপ্রপিতামহী। আজকের বলিউড তারকা সইফ শুধু সিনেমার জগতে নয়, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ধারক হিসেবেও পরিচিত।
যদিও নবাব বেগম ব্রিটিশ শাসনের বিরোধী ছিলেন না, তবে তিনি সর্বদা নিজের রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন রক্ষার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে যথেষ্ট সম্মান করত এবং তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতার জন্য প্রশংসিত হত। ১৯২৬ সালে সিংহাসন ছেড়ে তিনি তাঁর পুত্র হামিদ উল্লাহ খানকে নবাব ঘোষণা করেন এবং তাঁর বাকি জীবন সমাজসেবা ও শিক্ষা বিস্তারে ব্যয় করেন। তাঁর মৃত্যুর পরও বহত রাজ্যের উন্নয়নে তাঁর অবদান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। নবাব বেগম সুলতান জাহানের গল্প শুধু এক রাজশক্তির ইতিহাস নয়, বরং এক শক্তিশালী, শিক্ষানুরাগী ও প্রগতিশীল মহিলার অনুপ্রেরণার কাহিনি, যিনি নিজের প্রজাদের কল্যাণের জন্য রাজত্ব করেছেন।
বর্তমানে ভোপালের ১৫ হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি কার হাতে যাবে সেই নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে সুলতান জাহানের কাছ থেকে সেই সম্পত্তি পেয়েছিলেন তাঁর একমাত্র পুত্র নবাব হামিদুল্লাহ খান। হামিদুল্লাহের প্রথম সন্তান আবিদা পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ইফতিকার আলী খান পতৌদির স্ত্রী সাজিদার হাতে চলে যায়। বংশানুক্রমে তা মনসুর আলী খান ও সবশেষে সইফ এবং তাঁর দুই বোনের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।