নিউজ পোল ব্যুরো: নতুন বছরের ছুটিতে যদি কোলাহল এড়িয়ে নির্জন এক শান্ত পরিবেশে কাটানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে দাওয়াইপানি গ্রাম হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য। পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রাম একদিকে যেমন অফবিট ট্র্যাভেলারদের জন্য স্বর্গ, অন্যদিকে সকালের এক কাপ চায়ের সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগদ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার এক দুর্দান্ত সুযোগ এনে দেয়।
দাওয়াইপানি নামের উৎস এক আকর্ষণীয় কাহিনী বহন করে। স্থানয়ীদের মতে, ব্রিটিশ আমলে এই গ্রামের জল ওষুধের মতো কার্যকরী বলে মনে করা হত। শারীরিক সুস্থতার জন্য এই অঞ্চলের জলকে একসময় ব্যবহার করা হত, আর সেই থেকেই গ্রামটির নাম হয়ে ওঠে দাওয়াইপানি। দাওয়াইপানি গ্রামটি নিউ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি জংশন বা বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৭৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র টো কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই অফবিট গন্তব্যটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অন্যান্য আশ্রয়স্থল।
এই গ্রামে পৌঁছনোর জন্য অনেক উপায়েই রয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি জংশন থেকে প্রথমে জোড়বাংলো পর্যন্ত শেয়ার গাড়িতে যেতে পারেন। সেখান থেকে আলাদাই গাড়ি নিয়েই সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন দাওয়াইপানি। আপনি চাইলে সরাসরি একটি গাড়ি রিজার্ভ করেও পৌঁছে যেতে পারেন। এতে যাত্রা আরও আরামদায়ক হবে। এই গ্রামে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোমস্টে তৈরি হয়েছে, যেখানে পর্যটকদের জন্য আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সাধারণত ১২০০ – ২০০০ টাকা প্রতি ব্যক্তির খরচ পড়ে, যার মধ্যে থাকা ও তিনবেলার খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্থানীয় খাবারের স্বাদ ও আতিথেয়তা আপনার ট্রিপকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে।
দাওয়াইপানিতে সময় কাটানোর পাশাপাশি আপনি আশেপাশের কয়েকটি মনোরম স্থানে ঘুরে আসতে পারেন, যেমন—দার্জিলিং বিখ্যাত চা-বাগান ও মল রোডের জন্য প্রসিদ্ধ। পাশাপাশি ঘুম হল ভারতের সর্বোচ্চ রেলস্টেশন, যেখানে বিখ্যাত ঘুম মনাস্ট্রি অবস্থিত। ঘুরে নিতে পারেন লামহাটাও। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। এছাড়া রয়েছে তাকদাহ। এটি ব্রিটিশ যুগের বাংলো ও অসাধারণ অর্কিড গার্ডেনের জন্য পরিচিত। হাতে সময় থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন তিনচুলে। মেঘে ঢাকা পাহাড়ের গ্রাম, যেখানে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।
লাভার্স পয়েন্ট: রোমান্টিক ভিউ পয়েন্ট, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দাওয়াইপানি নির্জনতা ও সৌন্দর্যের এক অনন্য মিশ্রণ। দাওয়াইপানি শুধুমাত্র একটি ভ্রমণস্থান নয়, এটি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এক অসাধারণ জায়গা। এখানে নেই কোনও কোলাহল, নেই শহরের কৃত্রিমতা—শুধু পাহাড়, সবুজ বন, পাখির ডাক আর কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য। নতুন বছরে যদি একান্তে কিছু সময় কাটানোর ইচ্ছে থাকে, তাহলে নিশ্চিন্তে দাওয়াইপানিকে আপনার ট্রিপ লিস্টে রাখুন।