নিউজ পোল ব্যুরো: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। প্রত্যেক ঋতুতে লেগেই থাকে কোন না কোন অনুষ্ঠান। আর প্রতিটি অনুষ্ঠানের পেছনেই থাকে কোন না কোন পৌরাণিক কাহিনী। বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই রীতি প্রচলিত আছে। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতী পূজিত হন। হিন্দু ধর্ম অনুসারে এই দিনে মা সরস্বতী পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সনাতন ধর্মে বসন্ত পঞ্চমীর দিনটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
সরস্বতী পুজোর দিন অনেক বাড়িতে জোড়া ইলিশ বরণ একটি বিশেষ রীতি হিসেবে পালন করা হয়। এইদিন মূলত নিরামিষ খাবার গ্রহণ করলেও অনেক বাড়িতে রীতি রয়েছে জোড়া ইলিশ বরণ। যদিও এর সঠিক কারণ কেউ বলতে পারেন না। তবে এই প্রথা নিয়ে অনেক রকম গল্প প্রচলিত আছে। মূলত যা একটি বিশেষ রীতি হিসেবেই পালন করা হয়। পুর্ববঙ্গ যা এখন বাংলাদেশ সেখানে ইলিশ মাছ এই সময় থেকেই ধরা হতো বলে জানা যায়। যেহেতু ইলিশ সেদেশের একটি অর্থকারী ফসল, তাই তাকে সম্মান জানাতেই এই প্রথার উদ্ভব হয় বলেই অনেকে মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন খোকা ইলিশ যাতে না ধরা হয় সেই বার্তা দিতেই একটি পূর্ণ বয়স্ক মাছকে পুজো করা হয়। যাতে সমাজের কাছে এই সচেতনতার বার্তাটি খুব সহজেই পৌঁছে যায়।
যদিও বর্তমান সময়ে কর্মব্যস্ততার কারণে এই রীতি কিছুটা কমেছে, শহরের তুলনায় গ্রাম বা শহরতলিতে এই প্রথা এখনও ব্যাপকভাবে পালন করা হয়। এটি অবশ্যই পশ্চিমবাংলার আদি বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচলিত নয়। জোড়া ইলিশ বরণ মূলত পূর্ববঙ্গের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে বিক্রমপুর অঞ্চলের একটি ঐতিহ্য।

বিশেষত, হিন্দু ধর্মে ইলিশ মাছ কেনা খুব শুভ বলে মনে করা হয়। সরস্বতী পুজোর দিন জোড়া ইলিশ মাছ কেনা এবং সেই মাছকে বরণ করা এক অনন্য রীতি, তবে সরস্বতী পুজোর সঙ্গে সরাসরি এর কোনো সম্পর্ক নেই। দুটি ভিন্ন অনুষ্ঠান একই দিনে হওয়ায় এই দুই রীতি একসঙ্গে পালিত হয়। সরস্বতী পুজোর সকালে কাঁচা হলুদ মেখে বাজার থেকে ইলিশ মাছ কেনা হয়। বাড়িতে ফেরার সময় মাছের সঙ্গে ধান, দূর্বা,তেল,সিঁদুর ও কাঁচা হলুদ নিয়ে আসা হয়। এরপর উলু শঙ্খ ধ্বনিতে মাছটি কুলোর ওপরে সাজিয়ে রাখা হয়। অনেক পরিবারে এই রীতি অনুযায়ী, মাছের সঙ্গে দু’টি বেগুন বা লাউও রাখা হয়। কোন কোন বাড়িতে আবার এক ইলিশ মাছের সঙ্গে নোড়া রাখা হয়, যাকে ইলিশ মাছের বিয়ে বলা হয়।

মাছ কাটারও এক বিশেষ রীতি রয়েছে। যিনি মাছ কাটবেন তাঁকে সাধারণত কিছু টাকা দেওয়া হয়। মাছ কাটার সময় আঁশ যাতে চারপাশে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। মাছ কাটার পর আঁশ কলা পাতায় রেখে সেটি পরিষ্কার জায়গায় পুঁতে দিতে হয়। রান্নাতেও থাকে এক বিশেষ নিয়ম। কোন সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ বা ইলিশের নানা সুস্বাদু পদ নয়, জোড়া ইলিশ কেটে সব তরকারি ও ফোঁড়ন দিয়ে রান্না করা হয়। তাতে শুধু হলুদ ও কাঁচা লঙ্কা ব্যবহার করা হয়। এভাবেই বাঙালি সংস্কৃতিতে এই জোড়া ইলিশ বরণের রীতি সরস্বতী পুজোর দিনটিকে আরও সুন্দর করে তোলে।