বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: আসনে বসিয়ে নিজের বিয়ে করা বউকে পুজো! কেউ কখনো দেখেছে নাকি শুনেছে? তবু যদি এতেই শেষ হত। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গোঁড়া ব্রাহ্মণ একইসঙ্গে বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান হয়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ পাঠ! পেঁয়াজ-রসুন ভক্ষণ! ‘পাগল’, ‘ভণ্ড’ ইত্যাদি তকমা বরাতে জোটা তো অবধারিতই ছিল। জুটেওছে। ভাবতে কেমন অবাক লাগে না, তবু এরপরও নাকি রামকৃষ্ণ পরমহংসের (Ramakrishna Paramhansa) বাণীকে বলা হয় কথামৃত? অর্থাৎ তাঁর কথাকে কি না বলা হচ্ছে অমৃত সমান।
আরও পড়ুনঃ Maha Shivaratri 2025: কেন পালিত হয় মহাশিবরাত্রি? জেন নিন দিনটির তাৎপর্য
মহাভারতের কথাকে বলা হয় অমৃত সমান। এই কারণেই বলা হয়, মহাভারত দ্বাপর যুগের গল্প বললেও গল্পগুলি আজকের দিনে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। একইভাবে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসও (Ramakrishna Paramhansa) ঊনবিংশ শতকে বসে যে যে কথা বলে গিয়েছিলেন সেসব আজকের দিনেও একইরকম প্রাসঙ্গিক। আর সময় যত গড়াচ্ছে ততই যেন কেউ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের এক পাগল পুরোহিত যে যে কথা বলে গিয়েছিলেন সেসব কতটা যুক্তিযুক্ত।
ভারতবর্ষ এখন দ্বিমেরুকরণের শিকার। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ চায় সাম্প্রদায়িকতা ভুলে ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’ বাণীটিকে সত্যে পরিণত করতে। সেখানে আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ঠাকুর ছোট্ট একটি কথাতেই ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ। যত মত তত পথ। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ঈশ্বর এক এবং অভিন্ন। শুধু তার কাছে পৌঁছানোর জন্য অনেকগুলি পথ রয়েছে। মনে নিষ্ঠা এবং ভক্তি থাকলে এই সবকটি পথ ধরেই পৌছনো যায়।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।” এই এক কথাতেই স্বামীজি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর। স্বামীজির এই বিশ্বাস আসলে তো তাঁর গুরু প্রদত্ত শিক্ষারই প্রতিফলন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ (Ramakrishna Paramhansa) অনেক আগেই বলে গিয়েছিলেন, “শিবজ্ঞানে জীবসেবা।” আজকের দিনে যখন মানুষের জীবনের কানাকড়ি মূল্যও নেই তখন কি আরো বেশি করে প্রাসঙ্গিক মনে হয় না এই বাণী?
নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/
ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে ভক্তদের জীবনের পাঠ শিখিয়ে গিয়েছেন ঠাকুর। পরবর্তী সময়ে ঠাকুরের সেসমস্ত বাণী গ্রন্থবদ্ধ করে ‘রামকৃষ্ণ কথামৃত’ নাম দেন মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ওরফে শ্রীম। এই কথামৃতে উল্লেখিত ঠাকুরের বলা এক একটি গল্প পড়লেই বোঝা যায়, সময়ের থেকে কতটা এগিয়ে ছিলেন তিনি। সবথেকে বড় কথা, কথামৃত কিন্তু আসলে ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নির্দেশিত পথই তুলে ধরে। ভগবদ্গীতা যেমন আজকের দিনেও কোনো না কোনোভাবে পথ দেখায় মানুষকে, ঠিক তেমনই দেখায় কথামৃত। রামকৃষ্ণ কথামৃত যেন গীতারই সার্থক দ্যোতক।