নিউজ পোল ব্যুরো: আজ যখন শিক্ষার ভিত্তি টলমল (SSC 2025) করছে, তখন কিসুনের মতো শিক্ষকরা (WB Teacher Crisis) লড়ছেন শুধু নিজেদের জন্য নয়, ভবিষ্যতের এক আলোকিত প্রজন্মের স্বপ্ন রক্ষা করার জন্য।শিক্ষক শূন্য স্কুল। নতুন কোন শিক্ষক না আসায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। সেই পরিস্থিতিতে চাকরি হারিয়েও (Teacher Struggle) ছাত্রদের পাশে কিসুন। উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের ঘোড়াপাড়া গ্রামের আদিবাসী যুবক কিসুন বেসরা। যিনি দীর্ঘ বছর ধরে শিক্ষকতা যুক্ত ছিলেন , তবে আজ চাকরিহারা তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার তিনটি ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বহড়াদাঁড়ি জুনিয়র হাইস্কুলে পূর্ণ সময়ের একমাত্র শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে চাকরি চলে যায় তার হাত থেকে। এই ঘটনায় কেবল কিসুন নন, সমগ্র জঙ্গলমহলের শিক্ষা ব্যবস্থাই গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
বহড়াদাঁড়ি জুনিয়র হাইস্কুলে কিসুন বেসরা ছিলেন শিক্ষকতা করতেন। পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া সংখ্যা যেখানে ৪০ জন, সেখানে শিক্ষক ছিলেন একমাত্র তিনিই। প্রান্তিক অঞ্চলে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি ছিলেন অদম্য। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তার চাকরি বাতিল হওয়ায় স্কুলের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত কিসুন বেসরা পরিবার ও সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। চাকরি হারানোর পর তাঁদের জীবনে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা। তিনি জানান, “আমি শুধু আমার পরিবারের জন্য নয়, ওই গ্রামের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্যও লড়ছি। ওদের যেন শিক্ষা থেমে না যায়, সেই চেষ্টায় আছি।”

আরও পড়ুন: Calcutta High court: হেফাজতে ছাত্রীদের নির্যাতন, ক্যামেরায় কারসাজির অভিযোগ
চাকরি হারানো কিসুনের জায়গায় এখনও পর্যন্ত নতুন শিক্ষক না আসায় স্কুল কার্যত শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নপর্ব (পরীক্ষা) যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই লক্ষ্যে এগিয়ে এলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অজিত কুমার ভূঁইয়া। ইতিহাসের শিক্ষক অজিতবাবু ২০২২ সালের জুলাই মাসে এই স্কুল থেকেই অবসর নেন। কিসুন বেসরার অনুরোধ এবং অভিভাবকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি ফের স্কুলে ফিরে আসেন অঙ্ক পরীক্ষার দিন। একা হাতে সামলান পুরো দায়িত্ব। জেলা পরিদর্শকের দফতর মারফত পাঠানো আরেকজন শিক্ষক কিছুদিন পরেই অন্যত্র চলে যান। ফলে স্কুলে শিক্ষক সংকট দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। খুদে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকার স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই পড়ুয়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে।
ঝাড়গ্রাম জেলার বহু স্কুলে একই সমস্যা। কেবল কিসুন বেসরা নন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এই জেলার মোট ৫২৭ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। এই ঘটনায় গোটা জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে এক ভয়ানক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই সংকটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ খুলেছেন। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক প্রশাসনিক সভায় তিনি জানিয়েছেন, “যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাতিল হতে দেব না। যদি আদালতের মাধ্যমে সমস্যা না মেটে, তবে বিকল্প ব্যবস্থা করব।” একই সঙ্গে, তিনি চাকরি হারানো শিক্ষকদের স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে স্কুলে ফিরে গিয়ে পড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

জঙ্গলমহলের কৃতী আদিবাসী যুবক কিসুন বেসরা এখনো আশায় বুক বাঁধছেন। তিনি চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ করুক। চাইছেন রাজ্য প্রশাসন এই সংকটের স্থায়ী সমাধান করুক। অন্যথায়, বৃহত্তর আন্দোলনের (SSC 2025) পথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি ও আরও অনেক চাকরিচ্যুত শিক্ষক। অভিভাবকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে কিসুন স্কুলমুখী হওয়ায় খুশি স্কুলের পড়ুয়ারা।