ভেঙে পড়ল অঙ্গনওয়াড়ি শিশু কেন্দ্র

breakingnews জেলা রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির ভগ্নদশা নিয়ে বহুদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে। বিভিন্ন জায়গায় এই কেন্দ্রগুলির অবস্থা শোচনীয় হলেও প্রশাসনের নজর নেই। বাসন্তী ব্লকের ভরতগড় পঞ্চায়েতের ১৬৩ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি শিশু কেন্দ্রে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা সেই চিত্রকেই ফের সামনে আনল। জরাজীর্ণ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ায় গুরুতর জখম হন কেন্দ্রের রাঁধুনি সুধা সরদার এবং অভিভাবিকা সারথী সরদার সহ চার শিশু। আহত শিশুদের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণদ্বীপ সরদার, তানিসা মোল্লা, সুলতানা মোল্লা, খাদিজা মিস্ত্রী। স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে বাসন্তী ব্লক হাসপাতালে পাঠান। তবে অভিযোগ উঠেছে, দুর্ঘটনার পর পৌঁছানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না। আহতদের অটোতে করেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

ঘটনাস্থলে ভরতগড় পঞ্চায়েতের ৪ নম্বর গরানবোস গ্রামে ১৬৩ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি শিশু কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। ২০২০ সালের আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকেই কেন্দ্রটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই কেন্দ্রের ভগ্নদশা নিয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রটি নানান সমস্যায় জর্জরিত, যার ফলে এর কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রথমত, রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের খাদ্য বিক্রী করে সেই সরঞ্জাম কেনা হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্বিতীয়ত, সাপ, টিকটিকি এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব এই কেন্দ্রের পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এছাড়া, কেন্দ্রটি নিয়মিত মদের আসরের জায়গা হয়ে উঠেছে। যত্রতত্র পড়ে থাকা মদের বোতল পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে। কেন্দ্রটিতে জলের কল, বিদ্যুৎ কিংবা শৌচালয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই, যা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য হাবিবুর সরদার জানিয়েছেন, “সুপারভাইজার এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আমরা চাই কেন্দ্রটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।”

স্থানীয় গৃহবধূ তাপসী সর্দার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত কেন্দ্রটি সংস্কার করা হোক।” অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত দিদিমণি অনামিকা গুছাইত জানান, “বহুবার সংস্কারের আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। দুর্ঘটনার পর অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যায়নি। বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “ঘটনার বিষয়ে বিডিও-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বাসন্তীর বিডিও সঞ্জীব সরকার জানান, “খবর পেয়েছি। জয়েন্ট বিডিও এবং সিডিপিও-কে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মদের আসর বসার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

বাসন্তী ব্লকে মোট ৫৭৩টি অঙ্গনওয়াড়ি শিশু কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে ২১২টি কেন্দ্রের অবস্থা ভালো। বাকিগুলির অবস্থাও খারাপ। ১৬৩ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘটনা প্রশাসনের নজরে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও একবার তুলে ধরেছে। গ্রামবাসীদের দাবি, এই ঘটনা যেন প্রশাসনের কাছে সতর্কবার্তা হয় এবং কেন্দ্রটির দ্রুত সংস্কার করা হয়, যাতে শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। এখন দেখার বিষয় প্রশাসন কত তাড়াতাড়ি এই অঙ্গনওয়াড়ি শিশু কেন্দ্রটির সুরাহা করতে পারে।