নিউজ পোল ব্যুরো : একটি মুরগির মাথা কাটা গেছে অথচ সে বেঁচে ছিল ১৮ মাস, কি শুনেই অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ একদিন কিংবা দুদিন নয় মাথা ছাড়া একটানা ১৮ মাস বেঁচে বিশ্বরেকর্ড (World record) গড়েছিল এই আশ্চর্য্য মুরগি। সেই কারণেই আজও এই মুরগির স্মরণে একটা উৎসব পালন করা হয়, যার নাম ‘হেডলেস চিকেন ফেস্টিভ্যাল’। এই মুরগি তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে প্রায় দেড় বছর বেঁচেছিল। এই ইচ্ছেশক্তিকে কুর্নিশ জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ওই মুরগিটির স্মরণে তৈরি হয়েছে নানান ভাস্কর্য। বিশ্বরেকর্ড (World record) করা বিখ্যাত এই মুরগিটির নাম মিরাকেল মাইক।
একটি প্রাণীর দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাথা। কিন্তু এই মাথা ছাড়া কিভাবে দেড় বছর বেঁচেছিল মাইক? আমেরিকার কলোরাডোর ফুরুইটা শহরে খবর দোকানে মুরগি সাপ্লাই করতেন লয়েড ওয়েলসন ও তাঁর স্ত্রী ক্লারা ওয়েলসন। ১৯৪৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে ৪০টি মুরগিকে জবাই করার পর হটাৎ মাইকের চোখ পরে মাইকের ওপর। লয়েড দেখেন, শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেলেও মাইকে ঠিকই দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ঠিক তারপরেই মাথাহীন মাইকের মৃত্যুর অপেক্ষায় তাকে ধরে একটা বাক্সে রেখে দেন লয়েড। কিন্তু তিনি পরেরদিন খামারে ফিরে সেই বাক্সটা খুলতেই চমকে ওঠেন। তিনি দেখেন, ধরে থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেলেও তখনও বেঁচেছিল মাইক। দ্রুত এই খবরটি ছড়িয়ে পরে ছোট শহরে। মাইককে দেখার জন্য সাংবাদিক সহ স্থানীয় লোকেরা ভিড় জমাতে শুরু করে লয়েডের খামারে।
দুদিন আগে যে মুরগিটার কপালে খাবারের প্লেটে সুস্বাদু ডিস হওয়া লেখা ছিল, সেই মুরগি নিজের ইচ্ছেশক্তির জোরে রাতারাতি সেলেব্রিটি হয়ে যায়। অলোকিকভাবে রক্ষা পাওয়া এই মুরগিটির নামকরণ করা হয় ‘মিরাকেল মাইক’। ধীরে ধীরে গোটা আমেরিকায় নাম ছড়িয়ে পরে মাইকের। বিভিন্ন প্রদর্শনী থেকে ডাক আসতে থাকে। মাইকের দৌলতে গোটা আমেরিকায় ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয় লয়েডের। কিন্তু মাথা ছাড়া কিভাবে বেঁচেছিল মাইক – এই প্রশ্নটি জেগেছিল সেই সময়কার বিভিন্ন প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মনে।
সেই সময়ে মাইকের মতো মাথাহীন মুরগি তৈরি করতে গিয়ে একটার পর একটা মুরগি জবাই করে আমেরিকানরা। কিন্তু সেই সমস্ত মুরগিদের মধ্যে কোনোটাই একবেলার বেশি বাঁচেনি। আসলে মাইকের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ছিল আলাদা। লয়েড যখন মাইকের মাথায় কোপ মেরেছিলো তখন মাইকের একটা কান বাদ দিয়ে চোখ, ঠোঁটসহ গোটা মাথাটা কেটে গিয়েছিলো। কিন্তু আশর্য্যজনকভাবে লয়েডের এই কোপ থেকে মাইকের মাথায় ৮০ শতাংশ ব্রেন রাখা পেয়ে যায়, আর মুরগিদের মাথার পিছনেই থাকে তাদের মস্তিষ্কের মূল অংশ। এই মূল অংশ দিয়ে মুরগির মূলত নিজেদের শাসপ্রসাস, হৃদস্পন্দন এবং হজম পক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মাথা কাটা গেলেও নিজের বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছেশক্তির জোরে লড়াই চালাতে থাকে মাইক। মাইকের যেহেতু মাথা ছিল না তাই একটা ড্রপারের মাধ্যমে সরাসরি ওর খাদ্যনালীতে তরল খাবার দেওয়া হতে থাকে। এভাবেই কেটে যায় ১৮ মাস।
মাইক হয়ত আরও বেশ কিছু মাস বেঁচে থাকতো যদি না লয়েড ও ক্লারার একটা ছোট ভুল করতেন। আমেরিকার ফিনিক্স শহরে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রদর্শনীর শেষে মাইকের খাদ্যনালীর পরিষ্কার করার সিরিঞ্জটা ফেরত নিয়ে যেতে ভুলে যান লয়েড। যার ফলে ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসের রাতে গলায় খাবার আটকে দমবন্ধ হয়ে মারা যায় মাইক।
মাইক মারা গিয়েও মানুষের মধ্যে এখনও বেঁচে আছে। আমেরিকার কলোরাডোর ফুরুইটা শহরে গেলে এখনও মাইকের স্মৃতিতে তৈরি একটা মূর্তি দেখা যায়। মাইকের স্মৃতিতে প্রতিবছর মে মাসে ‘হেডলেস চিকেন ফেস্টিভ্যাল’ পালন করেন স্থানীয় অধিবাসীরা, যা অনেক পর্যটককে আকর্ষণ করে। মাইক প্রমান করে অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে লড়াই করে সমস্ত বাঁধা পেরোনো যায়। প্রকৃতিতে রহস্যের কোন শেষ নেই, এমন ঘটনা আমাদের কৌতূহল বাড়ায় ও জীবনের অদ্ভুত রূপ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়।