নিউজ পোল ব্যুরো: রোজকার মত বৃহস্পতিবার সকালেও নিউটাউন ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে আসেন প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা (BJP Leader) দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএসএফ (BSF) জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউয়ের (Purnam Kumar Shaw) দেশে ফেরা থেকে শুরু করে তুরস্ককে বয়কট, কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রীর আপত্তিকর মন্তব্য ইত্যাদি একাধিক বিষয় তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি চিরাচরিত ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতেও ছাড়েননি তিনি।
২২ দিন পাকিস্তানে আটক থাকার পর বুধবার দেশে ফিরেছেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ। ফ্ল্যাগ মিটিং করে তাঁকে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ভারতের হাতে প্রত্যার্পণ করেছে পাকিস্তান। এরপর রাতে কোচবিহারের কৃষক উকিল বর্মনকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। দীর্ঘ ১ মাস সে দেশের জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বলেন, “সেই সময় যদি অভিমন্যু বর্তমানের মত ফাইটার পাইলটকে ফিরিয়ে আনতে পারি তাহলে তারপর তো অনেক জল গড়িয়েছে। ভারত এখন শক্তসমর্থ দেশ। আমাদের সম্পূর্ণ ভরসা ছিল ভারত তার ফৌজিদের ফিরিয়ে আনবে। বাস্তবে সেটাই হল। বিশ্বে ভারতের সম্মান প্রমাণিত। মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।” অন্যদিকে পূর্ণমের ফিরে আসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) খোঁচা দিতেও ছাড়েননি দিলীপ। পূর্ণমের ফেরায় মমতার অবদান নিয়ে সমর্থকদের তরফে পোস্ট দেখা গিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। বিজেপি নেতার কথায়, “এরকমই হয়। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত যুদ্ধ জিতল মমতার জন্য। যুদ্ধ বন্ধ হল মমতার জন্য। পারমাণবিক বোমা ধ্বংস হল মমতার জন্য। বাংলাদেশ বলছে ইউনূসকে দেখে নাকি ভারত কাঁপছে। আমাদের এখানেও সোস্যাল মিডিয়ায় এইসব পোস্ট হয়।”
ভারত-পাক সংঘর্ষের সময় পাকিস্তানকে ড্রোন সরবরাহ করেছিল তুরস্ক। ফলে ‘বয়কট তুরস্ক’ স্লোগান উঠেছে দেশজুড়ে। এই প্রসঙ্গেও প্রশ্ন করা হয় দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh)। যার জবাবে তিনি বলেন, “ভারত বরাবরই মানবতার পক্ষে। ভারত তার সাধ্যমত করে। এটাই আমাদের সংস্কৃতি। তুরস্ককে এবার অন্যান্য দেশও বয়কট করবে। সহ্যের সীমা পার করেছে ওরা। বিশ্বাসঘাতকতার সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ নানারকমের হয়। এটা আর্থিক যুদ্ধ হবে। শুধু সরকার নয় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে চেতনা জেগেছে। তারাও আজ বয়কট তুরস্ক শ্লোগান দিতে শুরু করেছেন। এর ফল ওদের ভুগতে হবে।” এরই সঙ্গে যোগ করেছেন, “চিন প্রচুর জিনিস ভারতে বিক্রি করে। দুই বছর আগে দীপাবলির আগে ‘বয়কট চিন’ শ্লোগান উঠেছিল। এর ফলে ওদের ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছিল। ভারতের বাজার ১৫০ কোটি লোকের। সবার কাছে এই বাজার আকর্ষণীয়। তার ফায়দা নিতে গেলে আমাদের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করতে হবে। না হলে বদলা নেওয়ার ক্ষমতা ভারতের আছে।”
এদিকে সারা দেশ যখন সেনাবাহিনীর সাফল্যের গর্বে গর্বিত ঠিক তখনই অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) অন্যতম মুখ কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ বলে উল্লেখ করেছেন মধ্যপ্রদেশের উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রী কুনওয়ার বিজয় শাহ। যার জেরে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ আদালত। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ বলেন, “সেনারা ভারতের জন্য লড়াই করছেন। তাঁরা আমাদের গর্ব। তাঁদের সম্পর্কে কোনও নিন্দাসূচক বা গরিমা আঘাতকারী মন্তব্য কাঙ্খিত নয়। বাকিটা সরকার এবং আইন দেখবে। ওরা ধর্ম দেখে মেরেছে। আমরা কি ধর্ম দেখব? আমাদের কাছে সবাই সমান। সরকারি নীতির পক্ষে ওনার এই মন্তব্য খাপ খায়নি।” এর পাশাপাশি ভারতে পাকিস্তানি পতাকা নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে তাঁর সাফ বক্তব্য, “এই দেশে পাকিস্তানের পতাকার দরকার কি? পাকিস্তান দূতাবাসে পতাকা উড়ুক। পতাকা পরানো বা ওড়ানো কোনওটাই দরকার নেই। এই ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত।”
নিউজ পোল বাংলা ইউটিউব চ্যানেলের লিংক: https://youtube.com/@newspolebangla?si=Ygy6shQubNhWstbr
এদিকে বৃহস্পতিবার চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের আরও একবার বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযান। সেই প্রসঙ্গে বঙ্গ বিজেপির (BJP Bengal) প্রাক্তন সভাপতি বলেন, “সরকার নিজের সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষা প্রায় বন্ধ। অনেক শিক্ষক চলে গিয়েছেন। অনেক স্কুল প্যারা টিচার দিয়ে চলছে। স্কুল চলবে কীভাবে? সরকার তাই ওদের বারবার স্কুলে যেতে বলছে যাতে স্কুল চলে। যারা যাবেন তাদের ভবিষ্যত পরিষ্কার না করলে তারা যাবেন কেন? সরকারকে আগে স্পষ্ট করতে হবে কি চায়? কিছু লোককে ভাতা দেবে কিছু লোককে দেবে না এইভাবে কদিন চলবে? কেন সরকার কোর্টে বলছে না যারা যোগ্য তাদের চাকরি ফেরত দিন? অযোগ্যদের কাছ থেকে আপনারা টাকা নিয়েছেন। তাদের আপনারাই বুঝে নিন।” অন্যদিকে ডিএ মামলা পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) জানান, “এই সরকার থাকলে ওটা পাওয়ার আশা নেই।”