নিজস্ব প্রতিনিধি, গুঁড়ার: গুড়াপে শিশু কন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শোনাল চুঁচুড়া আদালত। আজ ১৭ জানুয়ারি গুড়াপের ওই শিশুর জন্মদিন। জন্মদিনের দিনেই বড় সাজা হল অভিযুক্তের।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি অভিযুক্তের সাজা ঘোষণা করেছিল পকসো আদালত। ঘটনার ৫৪ দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শোনাল পকসো আদালতের বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী। অল্প দিনের মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ায় স্বভাবত খুশি নির্যাতিতা শিশুর পরিবার। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, তথ্য প্রমান লোপাট, অপহরণসহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। অভিযুক্তকে আদালতে নিয়ে যাবার পথে দোষীর ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয় গ্রামবাসীরা। এরপর সাজা ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন প্রতিবেশীরা।
উল্লেখ্য , গত ২৪ নভেম্বর গুড়াপ থানা এলাকার পাঁচ বছরের এক শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী প্রৌঢ় অশোক সিংয়ের বিরুদ্ধে। অশোক পেশায় ঢাক বাজাতো ও রাজমিস্ত্রির কাজ করতো।
মেয়ে মাংস খেতে চাওয়ায় তার বাবা বাজার থেকে মাংস কিনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর অভিযুক্তের বাড়িতে ঢুকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানিয়ে দেয় মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। পরদিন শিশুর ময়নাতদন্ত করা হয় কলকাতায়। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি প্রিয়ব্রত বক্সির নেতৃত্বে বিশেষ টিম গঠন করে জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন। ২৬ নভেম্বর ঘটনাস্থলে আসে রাজ্য ফরেনসিক ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞরা।
শিশুর মা বাবা জানান, ‘এই রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। আজ মেয়ের জন্মদিন আর এই জন্মদিনেই এই রায় শুনিয়েছে আদালত। পুলিশ প্রশাসন খুব ভালো কাজ করেছে আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।’
ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় চার্জশিট ও ৫৪ দিনের মাথায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা চুঁচুড়া পকসো কোর্টে। গুড়াপে শিশুকে নির্যাতন করে খুনের ঘটনায় কম সময়ে সাজা ঘোষণায় দৃষ্টান্ত হল বিএনএস আইন চালু হওয়ার পর।
হুগলি গ্রামীণ পুলিশের সদর দফতর সিঙ্গুরের কামারকুণ্ডুতে সাংবাদিক বৈঠক করেন পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জিং ছিল মামলাটা। ঘটনার পর দিন সিট গঠন করা হয়। খুব দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত হয়েছে।
প্রসিকিউশন যে ভাবে কাজ করেছে যার ফলে খুব দ্রুত এই মামলার বিচার দেওয়া সম্ভব হয়েছে।’
শিশুর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘শিশুকে ফিরিয়ে দিতে পারব না কিন্তু সঠিক বিচারে তাঁরা মানসিক শান্তি পাবেন।’
মামলার সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘দিন রাত এক করে তদন্ত করেছে পুলিশ। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এই মামলা কতটা কঠিন ছিল।পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে এফএসএলের সাক্ষী খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যে সোয়াব নেওয়া হয়েছিল সেখানে ক্রমোজম পাওয়া যায় অভিযুক্তের। এটা এই মামলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যে ভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল শিশুটিকে তার তথ্য প্রমান যা দাখিল করা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য ছিল।
লিগাল সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রশান্ত কুণ্ডু ছিলেন আইনজীবী। তাঁর কিছু করার ছিল না।
মেয়েটার জন্ম হয়েছিল ১৭ জানুয়ারী ২০১৯ বেঁচে থাকলে আজ তার ছয় বছরের জন্মদিন পালন হত। তাই এক দিকে খারাপ লাগা এবং ভালো লাগা দুটোই আছে। মামলা আদালতে আসার পর মোটে ৩৩ দিন সময় পেয়েছিলাম।’
বিএনএস আইন চালু হওয়ার পর সব থেকে কম সময়ে বিচার হল দেশের মধ্যে বলেন পিপি। এই রায় মানুষের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফেরাবে বলে আশাবাদী তিনি।