নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতাঃ বিস্কুট তাও আবার মাটির তৈরি! শুনতে অবাক লাগলেও আসলেই এক বিশেষ প্রকার বিস্কুট তৈরি করা হয় মাটি দিয়েই। তবে জানেন কি ? এই প্রকার বিস্কুতেই লুকিয়ে থাকে অবিশ্বাস্য উপকারিতা। পশু অথবা পাখি নয়, মাটি দিয়ে তৈরি এই বিস্কুট খেয়ে থাকে এলাকার অধিকাংশ মানুষ।
এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মাটি দিয়ে তৈরি এই বিশেষ বিস্কুট বানানো হয় আলাদারকম যত্ন সহকারে। কোনও মহিলা গর্ভবতী থাকাকালীন যদি এই বিশেষ প্রকার বিস্কুট নিজের খাদ্যতালিকায় রাখেন তবে তা আরও বেশি ভালো বলেই মনে করেন গ্রামের সকলেই। এই বিশেষ প্রকার বিস্কুটের নাম ‘ছিকর’।
১ কেজি চিকোরের দাম প্রায় ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। ছিকরের প্রকারভেদে হেরফের হতে পারে দামের। এই বিস্কুট ভারতে নয়, বরং পড়শি দেশের বলেই পরিচিত। এই বিস্কুট শুধুই বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, কিশোরগঞ্জের কিছু গ্রামে বানানো হয়।বাংলাদেশের এই সমস্ত অঞ্চলে অল্পবয়স থেকে বয়স্ক অনেকেই কম বেশি এই বিস্কুট পছন্দ করে।
পদ্ধতি:
এই বিস্কুট তৈরির পদ্ধতি আর পাঁচটা বিস্কুট তৈরির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আটা,ময়দা,দুধ নয়! প্রথমে ফ্রেশ এটেল মাটি জমানো হয় এই বিস্কুট তৈরির জন্য। তারপর সেখান থেকে বেছে ফেলা হয় খড়কুটো। বাছাই করা মাটিতে পরিমাণমতো জল মিশিয়ে বানিয়ে নেওয়া হয় পেস্ট। এ ছাড়াও এই পেস্টে লবণ, নারিকেল, আদা, লংসহ নানা উপকরণ মেশানো হয়। এরপর আসে পেস্টটিকে আকার দেওয়ার পালা। তার জন্য মাটির পেস্টকে চ্যাপ্টা আকৃতিতে বেলে নিয়ে রোদে শুকানো হয়। একটু শক্ত হয়ে এলেই সেগুলোকে ছোটো টুকরো করে নেওয়া হয়,
বিস্কুটের আকারে। এরপর টুকরো করা বিস্কুটগুলোকে কড়া রোদে দুই থেকে তিন দিন শুকিয়ে এক প্রকাশ বিশেষ হাঁড়িতে জাল দেওয়া হয়। এই হাড়িতে লাগানো থাকে নেট। এরপর মাটির উনানে খড় জ্বালিয়ে ধোঁয়া তৈরি করা হয়। সেই ধোঁয়ার সাহায্যে হাড়িতে থাকা মাটির বিস্কুটগুলোকে ভাপ দেওয়া হয়। ঠিক যেভাবে পিঠে পুলি ভাপানো হয় খানিকটা তেমনই।
তবে এই বিস্কুটের সত্যিই কোনও উপকারিতার রয়েছে কি তা নিয়ে বিজ্ঞানের কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি এখনও পর্যন্ত। এর কোনও বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই বলে আবার দাবি করেন অনেকেই। কেবলমাত্র কয়েকটি স্থানীয় এলাকার মানুষজনদের কোথায় এটি উপকারী বলে ধরে নেওয়া হয় আগাগোড়াই। স্থানীয়দের মতে, এই বিস্কুট খেলে গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির অভাব দূর হয়।