নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: হুগলি জেলার বলাগড়, জিরাট ও খামারগাছির নার্সারি শিল্প এখন এক বিশাল কৃষি নির্ভর শিল্পে পরিণত হয়েছে। একসময় ওপার বাংলার অস্থির পরিস্থিতির কারণে এপার বাংলার নার্সারি ব্যবসায় ক্ষতির মুখ দেখতে হয়েছিল। কিন্তু সেই ক্ষতি এবার পুষিয়ে দিল উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভ মেলা।
প্রয়াগরাজে চলমান মহাকুম্ভ মেলায় দেশ বিদেশ থেকে কোটি কোটি পুণ্যার্থী সমবেত হয়েছেন। শাহি স্নানের দিনগুলোতে এতটাই ভিড় হচ্ছে যে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। বিপুল জনসমাগমের কারণে দুর্ঘটনায় ঘটছে, বাড়ছে নিখোঁজের সংখ্যাও। তবে এসব ছাপিয়ে মহাকুম্ভের প্রতি মানুষের আকর্ষণই বড় হয়ে উঠেছে। প্রচারিত হয়েছে যে ১৪৪ বছর পর আবার এই মহাযোগ আসবে, ফলে এই বিরল সুযোগকে কাজে লাগাতে পুণ্যার্থীরা দলে দলে ছুটছেন প্রয়াগরাজে। এই মহাকুম্ভ মেলার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে নার্সারি শিল্প। হুগলি জেলার বলাগড় ব্লকের প্রায় দুই হাজার নার্সারি থেকে লক্ষাধিক গাছ পাঠানো হয়েছে প্রয়াগরাজে, যার মধ্যে মূলত ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। কোটি টাকার ব্যবসা, হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান নার্সারি সভাপতি নবকুমার দাস জানিয়েছেন, বলাগড় ব্লকে প্রায় দুই হাজার রেজিস্টার্ড নার্সারি রয়েছে, যা সরাসরি এই যুক্ত। নার্সারি শিল্পে প্রায় দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কুম্ভমেলার বলাগড়ের নার্সারিগুলো থেকে গাছ পাঠানোর ফলে বিশাল অংকের ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
নার্সারি মালিক গৌতম দেবনাথ জানিয়েছেন, কুম্ভমেলার জন্য পাঁচশো কোটি টাকার একটি টেন্ডার পাশ হয়, যার মধ্যে শুধু বলাগড় থেকেই প্রায় দেড়শো কোটি টাকার গাছ পাঠানো হয়েছে। তিনি নিজেই দশ লক্ষ টাকার টাকার গাছ পাঠিয়েছেন, যা থেকে ভালো লাভ হয়েছে বলে জানান তিনি। আরেক নার্সারি মালিক রমেন্দ্র মহন্ত বলেন, বলাগড়ের গাছ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নয়, নেপাল ভুটান ও বাংলাদেশেও রপ্তানি করা হয়। এবার কুম্ভমেলার জন্যও বিপুল পরিমান গাছ পাঠানো হয়েছে। মূলত ডেকোরেশনের জন্য ফুল ও গাছের চাহিদা বেশি ছিল। নার্সারি মালিকদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহযোগিতা পেলে বলাগড়ের এই নার্সারি শিল্প আরও বিকশিত হতে পারে। কুম্ভমেলার গাছের বিশাল চাহিদা ও বিপুল পরিমান রপ্তানি দেখিয়ে দিয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গের নার্সারি শিল্প জাতীয় স্তরেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বলাগড়ের এই নার্সারিগুলো শুধু কর্মসংস্থানই সৃষ্টি করছে না, বরং দেশের বিভিন্ন বড় ইভেন্টেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।