নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজারহাট : শহর কলকাতার স্যাটেলাইট রাজারহাট নিউটাউন (Rajarhat Newtown)। চাঁদপুর কি ধীরে ধীরে দিল্লির (Delhi) দিকে পা বাড়াচ্ছে, অন্তত হালহকিকত যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে অচিরেই আপনি দেখতে পাবেন মিনি দিল্লির ছায়া। কথা বলছি রাজারহাটের (Rajarhat) ব্লকের চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোবারকপুর সম্পর্কে। সেখানে দিনের আলোতেই পথচলতি মানুষজন যেন অন্ধকারে হাঁটছেন! মেছো ভেড়ি সংলগ্ন ব্যস্ত রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করা পথচারী, স্কুল ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে গাড়ি চালকদেরও পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে (Misery)। একদিকে পথ চলতে গিয়ে নাকে রুমাল গুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে ধুলোর জন্য গাড়ির চালকরাও ভীষণ বিপাকে পড়ছেন।
আরও পড়ুনঃ Padma Murmu: বাংলার বৃদ্ধাকে ঘরে ফিরিয়ে দিল প্রশাসন
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বহুদিন ধরেই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এই ধুলো-বালি আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে, কিন্তু প্রশাসন (Administration) কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেড়ির মাটি তোলার নামে রাস্তা নষ্ট করে দিচ্ছেন। চাঁদপুর মোবারকপুর অঞ্চলের একাংশের মানুষ মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল। শীতের মরশুম শেষ হওয়ার পর যখন জলাশয় শুকিয়ে যায়, তখনই শুরু হয় নতুন মাছ চাষের প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতির অন্তর্ভুক্ত থাকে জলাশয়ের গুলিমাটি খোঁড়া, পাড় বাঁধানো ইত্যাদি সংস্কার (Renovation) কাজ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জলাশয়ের মাটি তুলে অন্যত্র বিক্রি করছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়! এই মাটি ইটভাটা সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতে প্রতিদিন একাধিক ডাম্পার (Dumper) যাতায়াত করছে ব্যস্ত রাস্তায়। আর সেই ডাম্পারের চাকা থেকে উড়তে থাকা ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে গোটা এলাকা। পথচারীদের চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠছে। স্কুলগামী শিশুরা চোখ খুলে হাঁটতে পারছে না, বাইকচালকরা ধুলোয় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
একজন ক্ষুব্ধ পথচারী জানালেন, ‘রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, সকালে বেরোলেই গলা শুকিয়ে যায়। ধুলো-বালি আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে, চোখ জ্বালা করছে, অথচ প্রশাসন চুপচাপ বসে আছে।’ শুধু ধুলো উড়ে অস্বস্তি (Trouble) তৈরি করাই নয়, রাস্তার পিচের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ভারী ডাম্পার চলাচল করায় রাস্তায় একাধিক জায়গায় ফাটল ধরেছে। রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। স্থানীয় এক গাড়িচালক ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, ‘এখানে প্রতিদিন ডাম্পার চলাচল করে, কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। রাস্তায় এত ধুলো উড়ছে যে গাড়ির কাঁচ পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায় না। এটা কি কোন রাস্তা নাকি ধুলোয় ঢাকা মরুভূমি?’
এলাকাবাসীরা বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন স্থায়ী সমাধান হয়নি। স্থানীয় চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বিষয়টি তাদের নজরে ছিল না। সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। রাজারহাটের (Rajarhat) চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আক্রমুল মোল্লা ওরফে মধু জানান, ‘এমন পরিস্থিতির কথা আমাদের জানানো হয়নি। সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জানার পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/
প্রশাসনের ((Administration) পক্ষ থেকে আশ্বাস মিললেও, স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন যে, এটি শুধুই কথার কথা না হয়ে যায়। আগেও বহুবার একইভাবে আশ্বাস দেওয়া হলেও, বাস্তবে কোনো পরিবর্তন আসেনি। স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিবারই প্রশাসন আশ্বাস দেয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। আমাদের বাচ্চারা ধুলোয় হাঁপিয়ে উঠেছে, স্কুলে যেতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছে। আর কতদিন চলবে এই অবস্থা?’
বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে (Movement) নামবেন। প্রয়োজন হলে পথ অবরোধ করা হবে, যাতে প্রশাসন বাধ্য হয় তাঁদের দাবি শুনতে। তাহলে প্রশাসন কি সত্যিই কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে, নাকি আগের মতোই শুধু আশ্বাস দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাবে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে চাঁদপুর মোবারকপুরের বাসিন্দাদের মনে।