নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাথরপ্রতিমা ব্লকটি ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে পাথরপ্রতিমার জি প্লট গ্রাম পঞ্চায়েত বঙ্গবসাগরের কুলবতী বিস্তীর্ণ এলাকায় বিস্তৃত। এই অঞ্চলে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে এক অদ্ভুত দৃশ্য, যা স্থানীয় মানুষের জন্য রীতিমতো চমকপ্রদ। জি প্লট গ্রাম পঞ্চায়েতের তটের বাজার সংলগ্ন সতীশ জানার ঘাট এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি হরিণ। এই হরিণটি কখনও গৃহপালিত পশুর সঙ্গে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কখনও আবার এলাকার বাড়িতে ঢুকে শাকসবজি খাচ্ছে। মাঝে মাঝে এলাকাবাসীর কাছেও আসছে।
অদ্ভুত হলেও সত্যি, এই দৃশ্য দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলছে। এলাকার মানুষের দাবি, প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে এই হরিণটি প্রথম দেখা যায়। এটি ছিল একটি হরিণ শাবক, যা নদীর চরে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের মধ্যে আসতে আসতে বড় হতে থাকে। এলাকার কলেজ ছাত্রীদের মতে, এক সময় ওই হরিণ শাবকটি নদীর তীরে ঘুরে বেড়াত এবং কিছুদিনের মধ্যে মানুষজনের সঙ্গে খুব সহজে মিশে যেত। এভাবে সে এক সময় গৃহপালিত পশুর সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে।
তাকে আর সম্পূর্ণ অজানা প্রাণী বলা যায় না। এলাকার মানুষ হরিণটিকে নিজের মতো করেই দেখাশোনা করে থাকে। তাঁরা একে কখনও খাবার দেয়, কখনও আদর করে বড় হতে সাহায্য করে। এমনকি এটি এখন এলাকাবাসীর কাছে প্রিয় একটি প্রাণী হয়ে উঠেছে। এলাকার মানুষের মধ্যে এই হরিণকে নিয়ে বেশ উৎসাহ এবং আগ্রহ রয়েছে। সবাই একে ভালবাসে এবং তার নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন। তবে এই দৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গে, প্রশাসন এবং বন দপ্তরও এই হরিণের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করছে। তাঁরা এলাকার মানুষকে নিয়মিতভাবে সতর্ক করে দিয়ে যায় যে, হরিণ শাবকটির যাতে কোনও ক্ষতি না হয় এবং সেটা যাতে নিরাপদে বড় হতে পারে। বনদপ্তরের কর্মীরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণও চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে কোন দুর্ঘটনা বা বিপদ না ঘটে।
এই বিরল দৃশ্যটি শুধু এলাকার মানুষের জন্য নয়, বরং বন, জীববৈচিত্র্য এবং প্রকৃতির প্রেমীদের জন্যও একটি আশার আলো। এমন একটি ঘটনা প্রমাণ করে যে, মানুষ এবং প্রকৃতি একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে। হরিণটি যে এতদিন ধরে মানুষের সঙ্গী হয়ে উঠেছে, তা একটি সুন্দর সম্পর্কের উদাহরণ। এটা এমন একটি দৃষ্টান্ত, যা আমাদের সকলকে প্রকৃতি এবং প্রাণীজগতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অনুপ্রাণিত করে। এত দিন পর, এই হরিণটি এক স্থানীয় আধ্যাত্মিক অভ্যস্ততার মতো হয়ে উঠেছে। হয়ত এটি প্রমাণ করে যে প্রকৃতির অদৃশ্য সুত্রই মানুষকে প্রকৃতির দিকে আরও কাছে নিয়ে আসে। এখানকার মানুষও তাদের ছোটোখাটো সাহায্যে এই হরিণটির শৈশবের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতে এই এলাকায় আরও আশার বার্তা নিয়ে আসবে।