বাড়ির পাশেই ইউরোপ, অপেক্ষা শুধুই আপনার

দেশ ভ্রমণ রাজ্য

নিউজ পোল ব্যুরো: শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির মন যেন বেড়ানোর নেশায় বুঁদ হয়ে যায়। ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি ভুলে একটু প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিংবা ঐতিহাসিক কোনো স্থানে সময় কাটানোর জন্য সবাই ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। অনেকেই কয়েক ঘণ্টার কিংবা এক-দু’দিনের জন্য কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যান। যদি আপনি এই শেষবেলার শীতে এক অফবিট জায়গা খুঁজছেন, যেখানে গেলে ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া পাবেন, তবে আপনার জন্য রয়েছে এক দারুণ গন্তব্য— ধান্যকুড়িয়ার গাইন বাড়ি। কলকাতার একদম কাছেই অবস্থিত এই স্থাপত্যশৈলী আপনাকে এক মুহূর্তে ইউরোপের অনুভূতি এনে দেবে। ঐতিহাসিক ও মনোরম পরিবেশের কারণে এটি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এই বিশাল অট্টালিকাটি প্রায় ৩০ একর জমির উপর নির্মিত, যা সম্পূর্ণভাবে ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া বহন করে। বসিরহাট-বেড়াচাঁপার টাকি রাস্তার ধারে অবস্থিত এই ভবনটি একদম দুর্গের মতো দেখতে। ইতিহাস বলে, প্রায় ১৫০ বছর আগে ধান্যকুড়িয়ার বিখ্যাত পাট ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ গাইন এই ভবনটি নির্মাণ করেন। সেই সময় ধনী জমিদাররা ইউরোপীয় স্থাপত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন রাজকীয় অট্টালিকা তৈরী করেছিলেন। এটি তারই এক অনন্য নিদর্শন। এই ভবনের চারপাশে রয়েছে এক সুন্দর বাগান, যেখানে হাঁটলে রাজকীয় পরিবেশের অনুভূতি পাবেন। ইউরোপীয় ধাঁচে নির্মিত এই অট্টালিকাটি এক সময় মহিলাদের শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যা পরে বাণীপুরে স্থানান্তরিত হয়।

প্রাক-স্বাধীন ভারতে ধান্যকুড়িয়ার এই রাজকীয় অট্টালিকা ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের জন্যও এক আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র ছিল। বিভিন্ন নৃত্য-গীতের আয়োজন, ভোজ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য এটি ব্যবহৃত হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে, তবে এর ঐতিহাসিক মূল্য আজও অমলিন। দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকার পর ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ধান্যকুড়িয়ার গাইন বাড়িকে হেরিটেজ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে এবং এখানে পর্যটন উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত, আর শীতের মরসুমে এটি হয়ে ওঠে এক অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। সেই জায়গাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে আপনার মন অবশ্যই চাইবে এক চুটে চলে যেতে সেখানে।

কেন ঘুরে আসবেন ধান্যকুড়িয়ার গাইন বাড়ি?

এটি ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান, এর সঙ্গে রয়েছে মনোরম বাগান ও পরিবেশ। এখানে এলে আপনারা পাবেন এক রাজকীয় অট্টালিকার অনুভূতি। এই শীতের শেষবেলায়, যদি আপনি কাছেপিঠে কোনো ঐতিহাসিক ও অপূর্ব স্থানে ঘুরতে যেতে চান, তাহলে ধান্যকুড়িয়ার গাইন বাড়ি হতে পারে আপনার সেই আদর্শ গন্তব্য। ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, আর উপভোগ করুন এক টুকরো ইউরোপের অনুভূতি কলকাতার কাছেই! তাই অপেক্ষা এখন শুধুই আপনার শুভযাত্রা জন্য।