নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পাঁচ মাস ৯ দিনের অপেক্ষার অবসান, আগামীকাল শনিবার শিয়ালদা কোর্টে আরজিকর মামলার শুনানি। কি হতে চলেছে শুনানিতে? সেদিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্য। অবশ্য এই সময়ে শুধু রাজ্য বললে ভুল হবে কারণ এই ঘটনা একসময় আলোড়ন সৃষ্টি করে রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা দেশজুড়ে। দেশের বাইরেও উঠেছিল প্রতিবাদের ঝড়। মহিলা চিকিৎসককে নির্মম ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পথে নামে আট থেকে আশি। ঘটনার গুরুত্ব এতটাই ছিল যে একটানা কয়েক মাস কলকাতা সহ বাইরের একাধিক জায়গাতেও প্রতিবাদের শক্তি কমেনি একবিন্দুও। আগামীকাল শনিবার অবশেষে সেই মামলার শুনানি।
ঘটনার পর থেকে প্রথমে আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে যেদিকে আঙুল তোলা হয় তা হলো রাজ্য সরকার। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হওয়ার সত্বেও একজন মহিলার উপর কিভাবে এত নির্মম অত্যাচার করা যায় সে নিয়ে সরব হয়েছিলেন অনেকেই। বেজায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। এদিকে আবার নির্যাতিতার হয়ে গলা ফাটানো হয় রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও। পথে নামের একাধারে সরকার থেকে বিরোধী সকলেই।
কিন্তু সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি আলোচ্য তা হল সাধারণ মানুষের কৌতূহল এবং মনের জোর। জাত,ধর্ম,রাজনীতির ঊর্ধ্বে সাধারন মানুষ যেন ঘরের মেয়ের অকাল বিদায়কে কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। বারংবার তাই সবকিছুর ঊর্ধ্বে পথে নেমেছিলেন বিচারের দাবিতে। বিচারের দিন যতই পিছুতে থাকে ততই মন ভাঙতে থাকে সাধারণ মানুষের। তবু ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতার রাতের সেই আগুন যেন জ্বলতেই থাকে মনের কোঠায়। তদন্তের গতিপ্রকৃতির দিকে তাই একইভাবে শুরু থেকে নির্যাতিতার মা বাবা ছাড়াও তাকিয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ।
যদিওবা আরজিকর হত্যাকাণ্ডের প্রথম তদন্ত শুরু করেছিল কলকাতা পুলিশ।আরজি কর হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত ১১ নভেম্বর। পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তের ভার যায় সিবিআই-এর হাতে। তবুও শেষের দিকে তাতেও যেন আস্থা হারিয়েছিলেন অনেকেই। তবে নির্যাতিতার মা বাবা ও আন্দোলনরত চিকিৎসকরা এখনো পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের গ্রেফতারিতে খুব একটা স্বস্তি প্রকাশ করেননি। তারপরেও তাদের অভিযোগ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আরও অনেকে, খুঁজে বের করতে হবে তাদেরকেও। আগামীকালই কি তবে খোঁজ পাওয়া যাবে তাদের? কি হতে চলেছে আদালতে? তবে কি এবার ফাঁস হবে ঘটনার পিছনে জড়িয়ে থাকা আরও কোন নতুন নাম?
আরজিকর হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও এখনও পর্যন্ত ধৃত একজন। সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাই। যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। সম্প্রতি জামিনে নিয়ে মুক্তি পেয়েছেন ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত সন্দীপ রাইও। আরজিকর মেডিকেলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ রায়ের বিরুদ্ধে পাকাপোক্ত চার্জশিট না দিতে পারায় মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পর মন ভেঙেছিল অনেকেরই, কেন তাকে জামিন দেওয়া হল? তার বিরুদ্ধে চার্জশিট নামানো গেল না সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসক এছাড়াও রাজনীতিবিদরা।
আরজি কর হত্যাকাণ্ডে তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও তৎকালীন টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে। কিন্তু সিবিআই কোনও তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে একসময় মুখ খুলতে দেখা যায় স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। বর্তমানে তাই জামিনে মুক্ত দুজনেই। তবে কি আবারও তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট আনতে চলেছে সিবিআই? নাকি অন্য কেউ যুক্ত হবে সেই তালিকায়?
এরই মধ্যে শিয়ালদা আদালতে এই মামলায় কলকাতা পুলিশের পথ অনুসরণ করেই ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানিয়েছে সিবিআই। তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে এই ঘটনায় সঞ্জয় রাই মূল অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে সব কিছু প্রমাণ আদালতে পেশ করে সিবিআই। এখন দেখার এই ঘটনায় আদালত সঞ্জয় রাইকে কি শাস্তি প্রদান করে।