বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: বিশেষ + জ্ঞ = বিশেষজ্ঞ। সত্যিই তাঁরা বিশেষভাবে ‘জ্ঞ’ অর্থাৎ জ্ঞানী। তাই তাঁদের বিশেষজ্ঞ বলে। তাঁরা বলেই দিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার অন্তত ২০ রান কম আছে। তাই অ্যাডভান্টেজ টিম রোহিত। রক্তচাপ বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ৯ বল বাকি থাকতেই যে জয় এল তাতে বিশেষজ্ঞদের প্রতি সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীর শ্রদ্ধা যে এরপর একটু হলেও বেড়ে যাবে তাতে কোন সংশয় নেই। আর বিরাট কোহলি (Virat Kohli)? তিনি নিজের প্রতি ভক্তদের শ্রদ্ধা কতটা বাড়িয়ে নিলেন মঙ্গলবারের সন্ধ্যায়?
আরও পড়ুনঃ IND Vs AUS: অজিদের ফাইনালে দেখছেন না ওঁরা
বিরাটকে (Virat Kohli) আজকাল লোকজন বলতে শুরু করেছে মহা বিরাট। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে সেই মহা বিরাটের কিছুটা ঝলক দেখেছিল ক্রিকেট দুনিয়া। এদিন যখন তিনি ক্রিজে এলেন, ভক্তরা আশায় বুক বেঁধেছিল ঠিকই। কিন্তু সেইসঙ্গে যে একরাশ ভয়ও বুকে বাসা বাঁধেনি সেটা জোর দিয়ে কেউ বলতে পারবেন কি? তিনি আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে গেলেন অধিনায়ক রোহিত (২৮)। ব্যাস এখানেই তো হয়ে গেল! অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আইসিসি প্রতিযোগিতার নক আউট ম্যাচে ২৬৫ তাড়া করতে নেমে অষ্টম ওভারেই হিটম্যান আউট। ভারত ৪৩/২। এরপরেও ফাইনাল খেলার স্বপ্ন কোন পাগলে দেখে?

এখানেই বিরাট (Virat Kohli) বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁকে মহাবিরাট বলা হচ্ছে ইদানিং। দুবাইয়ের মাঠে এদিন উইকেট ছিল একেবারে ব্র্যান্ড নিউ। তাতেও স্টিভ স্মিথরা পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেননি। মেইন ইন ব্লুকে সেই ভুল করলে চলত না। দরকার ছিল একটা বড় সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ অথবা ছোট ছোট কয়েকটা ৩০-৪০ রানের পার্টনারশিপ। প্রথমটি সম্ভব না হওয়ায় মহা বিরাট দ্বিতীয়টিই করে দেখালেন। প্রথমে শ্রেয়স আইয়ারকে (৪৫) সঙ্গে নিয়ে। তারপর যথাক্রমে অক্ষর প্যাটেল (২৭) এবং কে এল রাহুলের (৪২ অপরাজিত) সঙ্গে।
রবিবার ভারতের দেওয়া ২৫০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ফেঁসে গিয়েছিল মাঝ ওভারে। উইকেট না হারালেও স্কোরবোর্ড সচল রাখতে পারেননি উইলিয়ামসনরা। ফলে শেষ পর্যন্ত একেবারেই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় আস্কিং রেট। বিরাট (Virat Kohli) সেই ভুল নিজেও করলেন না। করতে দিলেন না সহযোগী ব্যাটারদেরও। ৯৮ বলে ৮৪ রানের ইনিংসে এসেছে মাত্র ৫টি চার। ৬৪ রানই দৌড়ে নিয়েছেন বিরাট। টি-টোয়েন্টিতে ভীমের গদার মতো ব্যাটটা ঘুরিয়ে ঝড় তোলার যুগে মানুষ ভুলতেই বসেছিল রানিং বিটুইন দ্য উইকেটসের মাহাত্ম্য। কিং কোহলির এদিনের ইনিংস আবারও দেখিয়ে দিল, কুড়ি-বিশের দুনিয়ায় যেমন তেমন, কিন্তু একদিনের ক্রিকেটে বাজি মারতে হলে মিডল ওভারে স্ট্রাইক রোটেশন চালু রাখাই সবথেকে জরুরি। তিনি থাকতে উল্টোদিকে উইকেট পড়লেও কখনো মনে হয়নি যে ভারত ম্যাচটা হারতে পারে।

তবু কেন শেষ করে এলেন না? এ যেন রান্নায় সবরকম মসলা দিয়েও আসল জিনিস নুনটাই না দেওয়া। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy 2025) ফাইনাল যে পাকিস্তান পাচ্ছে না সেটা নিশ্চিত করে দিলেও এমন একটা দুর্দান্ত ইনিংসের পর যেভাবে বিরাট অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে জাম্পাকে উইকেট দিলেন তাতে মনে হতেই পারে, নিজের পুরো মেহনতেই পানি ঢেলে দিয়েছেন বিরাট। এদিন সেঞ্চুরির থেকেও তাঁর পর্যন্ত থাকা বেশি দরকার ছিল না কি? তাতেই কি ন্যায়বিচার হত না? মঙ্গলবারের দুবাইয়ে মহাবিরাট হতে হতেও বিরাটে থেমে গেলেন কোহলি।
নিউজ পোল ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/1EA79Afcw5/
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy) ফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত। আইসিসি প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ল ভারত। বিরাট আউট হতে এইসব সম্ভাবনাও কিন্তু সাময়িক প্রশ্নের মুখে চলে গিয়েছিল। এই ধরণের সারফেসে আস্কিং রেট একবার ছয়ের উপর উঠে গেলে কী হতে পারে সেটা রবিবারের নিউজিল্যান্ড ম্যাচেই দেখে ফেলেছে সকলে। বিরাট ফিরতেই তাই চাপা উত্তেজনা শুরু হয়ে যায় মাঠ এবং মাঠের বাইরে। যাই হোক শেষপর্যন্ত কে এল রাহুল আর হার্দিক পাণ্ডিয়া মিলে জয় এনে দিয়েছেন। তাই এসব না ভাবলেও চলবে। জিতলে কে আর খামতি নিয়ে ভাবতে চায়? কিন্তু হারলে কী হবে তা রবিবারের আগে ভেবে দেখতেই হবে বিরাটকে। হবেই!